পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘গয়ানাথবাবু যখন সন্ত্রীক ব্রাহ্ম হলেন তখন হিন্দু সমাজের আত্মীয়ের তো বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল গয়ানাথবাবুকে । পথে বেরুলেই দুয়ো দিত স্বামীস্ত্রীকে সেকালের হিন্দুরা । কোনো চাকরি নেই বাকরি নেই, এক বস্ত্রে বেরিয়ে যেতে হল । আমার ঠাকুর্দা তখন হালিশহরে চাকরি করতেন ; তার বাড়িতে গিয়ে উঠলেন গয়ানাথবাবু, শুনেছি বাবার কাছে। গয়ানাথবাবুর আত্মীয়ের হালিশহর পর্যন্ত ধাওয়া করেছিল গয়ানাথবাবুকে, হানাবাড়ি হয়ে দাড়িয়েছিল ঠাকুর্দার ঘর কখানা । তেড়িয়া হয়ে ছুটে এসে আত্মীয়ের পচ} মুর্গির ডিম নাকে-মুখে ছুড়ে গয়ানাথবাবুকে নাকাল করত ; বলত, বেন্মে। হয়েছিস, নে খা হোমাপাখির ডিম খা ; একদিন একশটা পচা ডিম দিয়ে গয়ানাথবাবুকে গঙ্গাস্নান করিয়ে দিলে ; তিনি দাড়িয়ে-দাড়িয়ে সহ্য করলেন সব । ঠাকুর্দা সে দিন বাড়ি ছিলেন না । আশ্চর্য, মহানুভব মানুষ বটে গয়ানাথবাবু। অহিংসা, ক্ষম, সহিষ্ণুতা, প্রচার করেছিলেন গান্ধীজিও ! সে কালের ব্রাহ্মরাও নিজেদের জীবনে এ সব খুব দেখিয়ে গেলেন বটে।’ ‘কী হবে এ সব কথা বলে এখন ? ‘শহিদদের অগ্নিযুগের কথা বলা হয়, এও আর-এক রকম অগ্নিযুগের কথা— নানা রকম সমাজ ও ধর্মসংস্কারের দিক দিয়ে ।” কী হবে এ সব কথা এখন আমাকে শুনিয়ে নিশীথবাবু ? নিশীথ এক টিপ নস্থ্যি নিয়ে বললে, ‘গয়াবাবুর কথা বলছিলাম। এমন লোক অনেক দিন দেখি,নি।’ ‘আমি যা বললাম সে কথার উত্তর দিন, জয়নাথ চুরুটটা তার মুখের কাছে তুলতে-তুলতে বললে, “আমার বাড়িতে এসে এ সব কথার পাট নিয়ে বসেছেন, নিশীথবাবু আপনি । ‘ই বছর রুখেছিলেন ঠাকুর্দী আর বাবা, গয়ানাথবাবুর ড্যাকরণ আত্মীয়দের । পচা ডিম, পাকাল মাছ, কুকুর-শুয়োরের, মানুষের বিষ্ঠা ছোড়া দেহজিপনা একা হাতে লড়ে শায়েস্তা করেছিলেন ঠাকুর্দা । সযুৎ হল, ঠাণ্ডা হল সব । দু বছর গয়ানাথবাবুদের ভাত, কাপড়, সব কিছুর ব্যবস্থা করলেন ঠাকুর্দা তার নিজের বাড়িতে। আস্তে-আস্তে শান্তি এল তার পর । গয়াবাবু আর তার স্ত্রী ব্রাহ্ম সমাজে প্রতিষ্ঠিত হলেন । আপনি, অজয়নাথ, মনোরমাদি, আপনার বাবা-মার সঙ্গে আমার ঠাকুর্দার বাড়িতেই ছিলেন তখন । দু বছর আমাদের বাড়িতে ২৯২