পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভেতর বসে থেকে প্রকৃতির সে সব ছোট্ট শ্ৰীমতীদের দিকে ফিরে তাকাতে গেলনা এবারে আর হীরীত ; যে-মেয়েটি তার ঘরের ভেতরে এসে বসেছে সে সক সময়ই এখানে বসে থাকবে, সব সময়ই তাকে কাছে পাওয়া যাবে, মনে ভেবে হারীত নিজের চিত্তার ও প্রকৃতির আলো-নিরালোর ভেতরে চলতে-চলতেজুলেখার থেকে অনেকখানি দূরে যেন সরে গিয়েছিল ; তাড়াতাড়ি ফিরে এসে জুলেখার কথা শেষ না হতে—তার ঠোট-মুখ-চোখের ইঙ্গিত, জিহবা ও দণতের পরিষ্কার নিঝ"রের মত উচ্চারণের দিকে, শরীরের দিকে মেয়েটির, বিমুগ্ধ হয়ে বুকে রইল যেন খানিক—তার মনের ভেতরে প্রবেশ করতে করতে । জুলেখা তাড়াহুড়ো করে কথা বলবার দরকার অনুভব করে নি, যদিও কাজের মানুষ সে। এখন, কাজের মানুষ ও অবসরের মানুষ একই সঙ্গে, একটি মধ্যরাত্রির নক্ষত্রের মত, অকৃত্রিমভাবে । কথা শেষ করে থেমে থেকে জুলেখা হারাতের দিকে তাকাল ; বিকেল শেষ হয়ে আসছে, এ যুগের জীবনও বিকেলের বড় ছায়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে । ‘অর্চনা আমার চেয়ে চার-পাচ বছরের বড়, তুমি আমার চেয়ে ঠিক যেটুকু দরকার ততটুকু ছোট । আমাদের দেশে পুরুষের সঙ্গে মেয়েমানুষের সম্পর্কের দিক দিয়ে আচনার চেয়ে তুমি ভাল জায়গায় দাড়িয়ে ভাল কথা বলছ । তোমার কথা ভাল লাগছে আমার । যে-বোলতাগুলো প্রকৃতির ভেতর হারিয়ে গেছে তাদেরই এক-আধটা হুল যেন হারীতের কথার ভেতর জুলেখাকে বিধবার জন্যে, হয় তো নিজের মনের সব চেয়ে আগন্তরিক কথাগুলো হুলেবিষে জড়িয়ে পড়ে হীরীতের এমনিই ভেবে দেখছিল জুলেখা । ‘তোমার মা কে, চিনেছ তো তাকে তুমি ? হারীত সচকিত হয়ে জুলেখার দিকে তাকাল । সুলেখার ঈষৎ মোলায়েম নাকের তুলনায় কী তীব্র উন্নত নাক জুলেখার, থুতনি কড়ির মত সাদা, কঠিন । কিন্তু স্নেহগুণ সব সময়ই ছিল, বাইরের বাতাস পেয়ে আগস্তে-আগস্তে স্নিগ্ধই হয়ে উঠছে । কেমন বিচিত্র বিতিকিচ্ছিরি কথা প্রয়োগ করবার পরও কী রকম: আশ্চর্য সরসতা ; পৃথিবীর সব দিকেই তো রাত এখন—তবুও যেন ভোর হল এমনই আলোকপ্রসৰী আলোর মতন यूथ । Wobb*