পাতা:জীবনী সংগ্রহ - গনেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীৰূপ ও সনাতন গোস্বামী। v99 পরাধীন ( কুলবতী) রমণী গৃহকৰ্ম্মে নিযুক্ত থাকিয়াও যেমন নবসঙ্গের রস মনে মনে আস্বাদন করে, সেইরূপ বিষয়কৰ্ম্মে ব্যাপৃত থাকিয়াও তোমরা ঈশ্বরের চরণ-চিন্তা করিবে। চৈতন্যদেবের উপদেশ প্রাপ্ত হইয়া রূপ ও সনাতনের প্রাণ নূতন ভাৰে আন্দোলিত হইতে লাগিল। এক দিবস নিশীথ সময়ে যখন মুষলধারে বৃষ্টি পতিত হইতেছিল, মেঘের গৰ্জনে চারিদিক বিকম্পিত হইতেছিল, প্ৰবল ঝড়ে বড় বড় গাছসকল মড়মড় শব্দে ভাঙ্গিয়া পড়িতেছিল, পথে জনপ্ৰাণীর যাতায়াত ছিল না, ঠিক সেই সময়ে শ্ৰীৰূপ নবাবের কাৰ্য্যে আহুত হইয়া ঐ ভীষণ রাত্ৰিতে কোন এক পথ দিয়া যাইতেছিলেন। যে সময়ে তিনি এক ঘর দারিদ্র্য-প্ৰপীড়িত, পর্ণকুটীরবাসী ধীবরের কুটীর-পাশ্ব দিয়া যাইতেছিলেন, সেই সময়ে ধীবর-পত্নী জল ভাঙ্গিয়া যাওয়ার ছপ ছপ শব্দ শুনিতে পাইল। স্ত্রীলোক স্বভাবতই ভীতা ; সে ঐ শব্দ শুনিয়া স্বামীকে জিজ্ঞাসা করিল, “এই দুৰ্য্যোগে এত রাত্রে কে বাহির হইয়াছে ?” ধীবর বলিল, “এ সময়ে কুকুর ভিন্ন আর কে যাইবে।” ধীবর-পত্নী বলিল, “না, এ দুৰ্য্যোগে কুকুরও ঘরের বাহির হয় না। আমার বোধ হয়, কোন ধনী লোকের চাকর হইবে।” ধীবর-পত্নীর কথা শুনিয়া শ্ৰীৰূপের চৈতন্য হইল। “অৰ্থলোভে বশীভূত হইয়া রাজগৌরবে স্বাক্ষীত হইয়া, আমি কিনা পশু অপেক্ষাও অধম বৃত্তি অবলম্বনে জীবিকানিৰ্বাহ করিতেছি,” এই চিন্তাতে র্তাহার মন আলোড়িত হইতে লাগিল। এই চিন্তাতেই তঁহার বৈরাগ্যের উদয় হইল। তিনি রাজবাটী হইতে ফিরিয়া আসিয়া সনাতনের নিকট সকল কথা ব্যক্ত করিলেন। শ্ৰীচৈতন্যদেব নীলাচল হইতে শান্তিপুরে আসিবার সময় রামকেলীতে আসিয়াছিলেন। ঐ সময়ে রূপ ও সনাতনের সহিত র্তাহার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। র্তাহারা মহাপ্রভুর মুখে ভক্তিতত্ত্ব ও প্রেমসাধনের বিষয় শ্ৰবণ।