পাতা:টুনটুনির বই.djvu/১০৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সাক্ষী শিয়াল

একজন সওদাগর একটি ঘোড়া নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিল। যেতে যেতে তার বড্ড ঘুম পেল। তখন সে ঘোড়াটিকে এক গাছে বেঁধে, গাছের তলায় ঘুমিয়ে রইল।

 এমন সময় এক চোর এসে সওদাগরের ঘোড়াটিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে।

 সওদাগর ঘোড়ার পায়ের শব্দে জেগে উঠে বললে, ‘কি ভাই, তুমি আমার ঘোড়াটিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?’

 চোর তাতে ভারী রাগ করে বললে, ‘তোমার ঘোড়া আবার কোনটা হল?’

 শুনে সওদাগর আশ্চর্য হয়ে বললে, ‘সেকি কথা! তুমি আমার ঘোড়া নিয়ে চলে যাচ্ছ, আবার বলছ কোনটা আমার ঘোড়া?’

 দুষ্টু চোর তখন মুখ ভার করে বললে, ‘খবরদার। তুমি আমার ঘোড়াকে তোমার ঘোড়া বলবে না।’

 সওদাগর বললে, ‘কি? আমি আমার ঘর থেকে ঘোড়াটাকে নিয়ে এলুম, আর তুমি বলছ সেটা তোমার?’

 চোর বললে, ‘বটে! এটা তো আমার ঐ গাছের ছানা। এক্ষুণি হল। তুমি বুঝে শুনে কথা কও, নইলে বড় মুশকিল হবে।’

 তখন সওদাগর গিয়ে রাজার কাছে নালিশ করল, ‘মহারাজ, আমি গাছে আমার ঘোড়াটি বেঁধে ঘুমুচ্ছিলুম, আর ঐ বেটা এসে তাকে নিয়ে যাচ্ছে।’

 রাজামশাই চোরকে ডেকে জিগগেস করলেন, ‘কি হে, তুমি ওর ঘোড়া নিয়ে যাচ্ছ কেন?’

 চোর হাত জোড় করে বললে, ‘দোহাই মহারাজ! এটি কখনোই ওর ঘোড়া নয়। এটি আমার গাছের ছানা। ছানাটি হতেই আমি তাকে নিয়ে যাচ্ছিলুম, আর ঐ বেটা উঠে বলছে কিনা ওটা ওর ঘোড়া, সব মিথ্যে কথা!’

 তখন রাজামশাই বললেন,—‘এ তো ভারী অন্যায়। গাছের ছানা হল, আর তুমি বলছ সেটা তোমার ঘোড়া। তুমি দেখছি বড় দুষ্টু, লোক। পালাও এখান থেকে!’ বলে তিনি ঘোড়াটা চোরকেই দিয়ে দিলেন।

 সওদাগর বেচারা তখন মনের দুঃখে কাঁদতে-কাঁদতে বাড়ি ফিরে চলল। খানিক দূরে গিয়ে এক শিয়ালের সাথে তার দেখা হল।

 শিয়াল তাকে কাঁদতে দেখে বললে, ‘কি ভাই? তোমার মুখ এমন ভার দেখছি যে! কি হয়েছে?’

১০১