পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 একদা রসাঙ্গের অধীশ্বর ও গোবিন্দ মাণিক্য একত্রে উপবেশন পূর্ব্বক বাক্যালাপ করিতেছেন—এমন সময়ে সুজা তথায় উপস্থিত হইলে, পূর্ব্বপরিচয় থাকা বশতঃ গোবিন্দ মাণিক্য তাহাকে সসম্ভ্রমে অভ্যর্থনা করেন। তাহা পর্য্যবেক্ষণ করিয়া—জনৈক ম্লেচ্ছ যবনকে এবংবিধ সম্মান প্রদর্শন করিবার কারণ কি—এই কথা রসাঙ্গের অধিপতি গোবিন্দ মাণিক্যকে জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি তৎসমীপে মুজার কুলমর্য্যাদার পরিচয় প্রদানপূর্বক তাহার সমস্ত অবস্থা জ্ঞাপন করেন।

 এই বিষয় বঙ্গ ভাষায় রচিত ত্রিপুররাজ-বংশ চরিত রাজমালায় নিম্নরূপ লিপিবদ্ধ আছে।

আউরঙ্গজেব বাদসা তখনে হৈল।
রাজ্য ভ্রষ্ট হৈয়া সুজা রসাঙ্গেতে গেল।
গোবিন্দ মাণিক্য রাজা সেই স্থানে ছিল।
হেন কালে সুজা বাদসা উপস্থিত হৈল॥
ত্রিপুর রসাঙ্গ রাজা বৈসে সিংহাসনে।
বাদসা দেখিয়া ত্রিপুর উঠিল তখনে॥
সিংহাসন হৈতে লামে ত্রিপুর-রাজন।
সুজা বাদসা সিংহাসনে করিল স্থাপন॥
রসাঙ্গের মহারাজা বলিল আপন।
কি কারণে ম্লেচ্ছ রাজা দিছ সিংহাসন॥
রাজা বলে নরেশ্বর করি নিবেদন।
এহিত সুজা বাদসা বিখ্যাত ভুবন॥

   রাজমালা—গোবিন্দ মাণিক্য খণ্ড

 আরাকান অধিপতি সুজার প্রকৃত পরিচয় প্রাপ্ত হইয়া তাঁহাকে সাদরে সম্ভাষণ করেন এবং এতদ্ব্যতীত গোবিন্দ মাণিক্যের সকরুণ অনুরোধে বশীভূত হইয়া তিনি সুজাকে আশ্রয় প্রদান করিতে প্রতিশ্রুত হন।

 গোবিন্দ মাণিক্যের এবম্ভূত সৌজন্যের বিনিময়ে সুজা তদীয় কটী-বন্ধ সংলগ্ন দুষ্প্রাপ্য পারস্য দেশীয় তরবারি এবং মূল্যবান হীরকাঙ্গুরী উন্মোচন পূর্ব্বক এই কথা বলিয়া সবিনয়ে গোবিন্দ মাণিক্যকে প্রদান করেন—“ভারত সম্রাটের পুত্র হইয়াও অদৃষ্ট দোষে আজ আমি পথের ভিখারী, এই দুইটী ব্যতিরেকে আপনাকে প্রদান

ত্রিপুরার স্মৃতি
৩১