স্বর উত্তর করিল,- “এই ঘরের কোণে ।” যেদিক হইতে শব্দ আসিতেছিল, সেই কোণের দিকে চাহিয়া আমি বলিলাম,- “ও কোণে তো কিছুই নাই, কেবল জলের কলসীটি রহিয়াছে!” স্বর উত্তর করিল,— “আমি এই জলের কলস। এ-জন্মে আমি জলের কলস হইয়াছি।” আমি বলিলাম,- “আপনি জলের কলস হইয়াছেন!! আপনি কে?” স্বর উত্তর করিল,— “আমি সনাতন নস্কর। আর জন্মে। আমি তোমার প্রতিবেশী ছিলাম। আমাকে মনে নাই?” সত্য বটে, সনাতন নস্কর নামে আমাদের এক বৃদ্ধ প্রতিবেশী ছিলেন। তিনি অতি সজ্জন ছিলেন। তাঁহাকে আমরা বিশেষরূপে মান্য করিতাম। আশ্চৰ্য্য হইয়া আমি জিজ্ঞাসা করিলাম“আপনি নস্কর মহাশয়? এ-জন্মে। আপনি মেটে কলসী হইয়াছেন? মানুষ মরিয়া কলসী হয়?” কলসী উত্তর করিলেন, — “মানুষ মরিয়া নানা রূপ হয়। সে রূপের সংখ্যা চৌরাশি হাজার ।” - আমি বলিলাম,— “জীবিত অবস্থায় আপনি একজন সাধুপুরুষ ছিলেন, তবে কেন আপনাকে সামান্য একটি মেটে কলস হইতে হইয়াছে?” নস্কর মহাশয় অর্থাৎ কলসী উত্তর করিলেন,— “আমি তো তবু অনেক ভাল দ্রব্য হইয়াছি। জগবন্ধুকে জােন? জগবন্ধুর মা মরিয়া সামান্য একখানি খুরি হইয়াছে।” আমি বলিলাম, মুঠি দেিয়ছি যে, জীবাত্মার ভূমি ক্ৰমে উন্নতি হয়। কুম্ভকারের দ্রব্যে পরিণত হইলে জীবাত্মার উন্নতি কিরূপে হয়?” @ নস্কর মহাশয় উত্তর করিলেন, — “জগবন্ধুর স্থা এখন খুরি হইয়া আছেন। আর-জন্মে তিনি হয়তাে একখানি সরা হইবেন। আর তার গুর্ভূজন্মে হয়তো তিনি মালশী হইবেন। তারপর হয়তো তিনি একখানি তিজেল হইবেন।তেঁপরপর তোলো হাঁড়ি—এইরূপ ক্রমে ক্রমে তিনি উন্নতিলাভ করিবেন। আমি এখন আছি। আর-জন্মে। আমি হয়তো পূজার ঘট হইব। তাহার পর হয়তো পিতলের ঘাড়া হইব। কিন্তু আমি আর অধিক বকিতে পারি না। আমার কণ্ঠ শুষ্ক হইয়া গিয়াছে। পিপাসায় বড় কাতর হইয়াছি। তোমার উপর যে সমুদয় অত্যাচার হইয়াছে, কয়দিন তাহা এই কোণে বসিয়া সমস্ত আমি দেখিয়াছি। তোমার পিতার পুত্র যে এমন কুলাঙ্গার হইবে, স্বপ্নেও তােহা কখন আমি ভাবি নাই। কয়দিন একছটাক জলও কেহ। আমাকে প্ৰদান করে নাই। শুষ্ক হইয়া আমি ঢন-চন করিতেছি।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “এক্ষণে কি করিতে আপনি আমাকে আজ্ঞা করেন?” নস্কর মহাশয় বলিলেন,- “প্ৰথমে আমাকে লইয়া বাহিরে চল । তাহার পর পুষ্করিণী হইতে আমাকে জলে পূর্ণ করিয়া আমার পিপাসা নিবারণ কর। তাহার পর, আমি এ পাপ পৃথিবীতে আর থাকিতে ইচ্ছা করি না। কলিকাতায় লইয়া আমাকে গঙ্গাজলে নিক্ষেপ কর।” আমি বলিলাম,- “ওকুর ও তাহার বন্ধুগণ পায়ে বেড়ি দিয়া আমাকে লীেহ-শৃঙ্খলে আবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছে। কি করিয়া আমি আপনাকে বাহিরে লইয়া যাইব?” নস্কর মহাশয় উত্তর করিলেন,- “তোমার পায়ের দিকে চাহিয়া দেখ।” আমি আমার পায়ের দিকে চাহিয়া দেখিলাম। আশ্চৰ্য্য! এতোক্ষণ আমি কিছুই জানিতে পারি নাই; আমার পায়ে বেড়ি নাই, আমার পায়ে শৃঙ্খল নাই। অদ্ভুত মানিয়া সেই কলসীকে লক্ষ্য করিয়া নস্কর মহাশয়কে আমি নমস্কার করিলাম। లిరి দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboicomo
পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩২৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/7/7e/%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%88%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A5_%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9.djvu/page328-1024px-%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%88%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A5_%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9.djvu.jpg)