মাতা বলিলেন, — “না, বাবা! আমন কথা বলিও না। কাহার কখন কি দুৰ্দশা হয়, তাহা বলিতে পারা যায় না। তুমি আমি পাপ পুণ্যের বিচার করিতে পারি না। যাহাতে অন্ন বিনা তাহারা না মরে, সে উপায় তোমায় বাবা করিতে হইবে।” সুরেশ বলিল,— “আমি ! সে কি মা! এ কথা তুমি মুখে আনিলে কি করিয়া? প্ৰভাবতীর কথা কি তোমার মনে নাই?” মাতা বলিলেন,- “খুব মনে আছে, বাবা! রাত্রি দিন আমার বুকের ভিতর আগুন জুলিতেছে। কিন্তু আমার কথা তোমাকে রাখিতে হইবে। আমি স্ত্রীলোক; ভাল মন্দ বুঝিতে পারি না। আজ আমি কেবল ভাবিতেছি যে, যদি তিনি বাঁচিয়া থাকিতেন, তাহা হইলে এ মাতা বলিলেন, — “হাঁ, বাছা!! একবার ভাবিয়া দেখ, এ অবস্থায় তিনি কি করিতেন? তিনি যাহা করিতেন, তোমাকেও তাঁহাই করিতে হইবে।” সুরেশ বলিল,— “আমি নিশ্চয় জানি, বাবা ইহাদিগকে অনাহারে থাকিতে দিতেন না, নিশ্চয় ইহাদের অন্নকষ্ট দূর করিতেন। কিন্তু মা! আমি যে আর একটী সংসার প্রতিপালন করি, সে ক্ষমতা আমার নাই। এত টাকা আমি কোথায় পাইব?” মাতা জিজ্ঞাসা করিলেন, — “ভাল! পুনরায় আমাকে বল, এ অবস্থায় তিনি কি করিতেন?” সুরেশ কিছু অপ্রতিভ হইল। পিতা ও প্রভাবতীকে স্মরণ করিয়া, তাহার চক্ষুদ্বয় অশ্রুজলে পূর্ণ হইল। প্রভার নাম করিয়া মাতাও কঁদিতে লাগিলেন। কিঞ্চিৎ সুস্থির হইয়া অবশেষে সুরেশ ধীরে বলিল,- “এ অবস্থায় বাবা কি করিতেন?—বাবা নিজে না খাইয়া, নিজে উ ধ্ৰুরিয়া উহাদের আহার যােগাইতেন।” সুরেশ আর কোন উত্তর করিল নী”। আপনার ঘরে গিয়া বিছানার উপর বসিয়া, অনেকক্ষণ সে ভাবিতে লাগিল। পিতা, প্ৰভাবতী, মাশ্চন্টক, মাশ্চটকনী, সকলের কথা তাহার মনে উদয় হইতে লাগিল। সুরেশ একান্ত মনে চিন্তা করিতেছে, এমন সময় সহসা তাহার ঘরের বায়ু স্নিগ্ধ ও স্তম্ভিত হইয়া গেল। ঘরের বায়ু এরূপ ভাব ধারণ করিল যে, তাহা বৰ্ণনা করিতে পারা যায় না। ঘর এক অপূৰ্ব্ব সুগন্ধে পরিপূর্ণ হইল। সে সুগন্ধ পার্থিব নহে, স্বগীয়; সেরূপ সুগন্ধ সুরেশ কখন আঘাণ করে নাই। ঘরে অদৃশ্য ভাবে যেন কোন দেবতা অথবা মহাত্মার আবির্ভাব হইয়াছে, সুরেশের মনে সেইরূপ ভাবের উদয় হইল। সহসা সুরেশের দক্ষিণ হস্তে ঝিঝি ধরিল। ক্ৰমে ক্ৰমে দক্ষিণ হস্ত অসাড় অবশ হইয়া গেল। “উঠ, উঠ! কাগজ কলম গ্ৰহণ কর”— এইরূপ আদেশ দ্বারা সুরেশের মন উত্তেজিত হইতে লাগিল। কাহার সাধ্য যে, সে আদেশ প্রতিপালন না করিয়া সুস্থির থাকিতে পারে? সংজ্ঞা আছে—অথচ সংজ্ঞা নাই, এইরূপ অবস্থায় সে আদেশ তাহাকে প্রতিপালন করিতে হইল। ঘরের এক পার্শ্বে ছোট একটী মেজ ছিল ও তাহার সম্মুখে একখানি চেয়ার ছিল। মেজের উপর কাগজ, দোয়াত, কলম, পেন্সিল প্রভৃতি লিখিবার উপকরণ ছিল। সুরেশ গিয়া সেই চেয়ার অর্থাৎ চৌকিতে বসিয়া পড়িল। বাম হাতে একখানি কাগজ লইল । তাহার দক্ষিণ হােত অবশ হইয়াছিল। তাহার দক্ষিণ হস্ত দ্বারা কে যেন খপ্ করিয়া মেজের উপর হইতে একটা পেন্সিল তুলিয়া লইল । তাহার দক্ষিণ হাত (Sty află cios (gs se - www.amarboi conf**
পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫৩৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/7/7e/%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%88%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A5_%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9.djvu/page535-1024px-%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%88%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A5_%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9.djvu.jpg)