পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

থাকিবে না। এস, এখন সকলে কঙ্কাবতীর কাছে যাই, আর কঙ্কাবতীকে গিয়া বলি যে, কঙ্কাবতী তোমাকে আমাদের রাণী হইতে হইবে।

 তাহার পর মাছেরা কঙ্কাবতীর কাছে যাইল, আর সকলে বলিল,— “কঙ্কাবতী! তোমাকে আমাদের রাণী হইতে হইবে।”

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “এখন আমি তোমাদের রাণী হইতে পারিব না। আমার শরীরে সুখ নাই, আমার মনেও বড় অসুখ। তাই এখন আমি তোমাদের রাণী হইতে পারিবই না।”

 তখন কাতলানী বলিলেন,— “তোমরা রাজপোষাক প্রস্তুত করিয়াছ? রাজ-পোষাক না পাইলে কঙ্কাবতী তোমাদের রাণী হইবে কেন?”

 এই কথা শুনিয়া মাছেরা সব বলিল,— “ও হো বুঝেছি বুঝেছি। রাজ-পোষাক না পাইলে কঙ্কাবতী রাণী হইবে না। রাঙা কাপড় চাই, মেমের মত পোষাক চাই, তবে কঙ্কাবতী রাণী হইবে।”

 কঙ্কাবতী উত্তর করিলেন, “না গো না! রাঙা কাপড়ের জন্য নয়। সাজিবার-গুজিবার সাধ আমার নাই। একেলা বসিয়া কেবল কাঁদি, এখন আমার এই সাধ।”

 মাছেরা সে কথা শুনিল না। বিষম কোলাহল উপস্থিত করিল। তাঁহাদের কোলাহলে অস্থির হইয়া তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন,— “ভাল। না হয় আমি তোমাদের রাণী হইলাম। এখন আমাকে করিতে হইবে কি?”

 মাছেরা উত্তর করিল,— “করিতে হইবে কি? কেন? দরজীর বাড়ী যাইতে হইবে, গায়ের মাপ দিতে হইবে, পোষাক পরিতে হইবে।”

 সকলে তখন কাঁকড়াকে বলিলেন,— “কাঁকড়া মহাশয়! আপনি জলেও চলিতে পারেন, স্থলেও চলিতে পারেন, আপনি বুদ্ধিমান লোক। চক্ষু দুইটি যখন আপনি পিটপিট করেন, বুদ্ধির আভা তখন তাহার ভিতর চিকচিক্‌ করিতে থাকে। কঙ্কাবতীকে সঙ্গে লইয়া আপনি দরজীর বাড়ী গমন করুন। ঠিক করিয়া কঙ্কাবতীর গায়ের মাপটি দিবেন, দামী কাপড়ের জামা করিতে বলিবেন। কচ্ছপের পিঠে বোঝাই দিয়া টাকা মোহর লইয়া যান। যত টাকা লাগে, তত টাকা দিয়া, কঙ্কাবতীর ভাল কাপড় করিয়া দিবেন।”

 কাঁকড়া মহাশয় উত্তর করিলেন,— “অবশ্যই আমি যাইব। কঙ্কাবতীর ভাল কাপড় হয়, ইহাতে কার না আহ্লাদ? আমাদের রাণীকে ভাল করিয়া না সাজাইলে-গুজাইলে আমাদের অখ্যাতি। তোমরা কচ্ছপের পিঠে টাকা মোহর বোঝাই দাও, আমি ততক্ষণ ঘর হইতে পোষাকি কাপড় পরিয়া আসি, আর মাথার মাঝে সিঁথি কাটিয়া আমার চুলগুলি বেশ ভাল করিয়া ফিরাইয়া আসি।”

 কচ্ছপের পিঠে টাকা মোহর বোঝাই দেওয়া হইল। ততক্ষণ কাঁকড়া মহাশয় ভাল কাপড় পরিয়া, মাথা আঁচড়াইয়া, ফিটফাট হইয়া আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

৪৬
ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ