পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাকুরঘাটে যাবার ইমাদি-ওয়ালা জমিটকুতে ওই রকম জ্যোৎসনা পড়েছে। দীঘ শস্যক্ষেতের মধ্য দিয়ে ঘোড়া ছাড়লাম-যবের শীষে পা লেগে সিরাসির শব্দ হচ্ছিল। লোধাইটোলা ছেড়ে ঘোড়া খাব দৌড় করালাম--Ranchman's Ride-এর মত, খাব। গাম-যবের ক্ষেত দিয়ে একেবেকে খাব জোরে ঘোড়া ছটিয়ে এলাম। কাছারী পৌছালাম সন্ধ্যার এক ঘণ্টা পরে। অপৰিব জ্যোৎস্নার রাত্রি। দাওয়ায় চেয়ার পেতে বসে আছি। সামনের কাশবনে জ্যোৎস্না এসে পড়ে অপব্ব দেখাচ্ছে। কাছারীর অনেকে বটেশ্ববরনাথে গঙ্গাসন্নান করতে গিয়েছে, এখনও ফেরেনি। কত কি পাখী ডাকছে! বিহারের দিকদিশাহারা মাঠ, তার নিজজনতা, দ্য একটা সাথীছাড়া রব, কাশবন, বালিয়াড়ী, অস্তসায্যের রাঙা-আলো, অপৰিব জ্যোৎস্না—এই সবের মোহ ক্ৰমে ক্ৰমে মাথায় পেয়ে বসেছে। বড় আনন্দে দিন আজ কাটল। যাতায়াতে চব্বিশ মাইল ঘোড়া-চড়া হ’ল আজি । আজ জয়পালটোলার নিজজন ছায়াপথটা দিয়ে আসতে আসতে কেবলই মনে হচ্ছিল,—দরে সেই হাটবার, পবিমাখো যাওয়া থেকে বহরদার জীবনপথে চলেছি। সেই কুলক্ষেতে যাওয়ার দিন, সেই বাঁশবন পোড়ার দিনগালো-কত কত পিছিয়ে পড়ে গিয়েছে! এই উদাস ঘর্ঘর ডাক, রাঙা অস্ত-সায্যের রোদ, এই গতির বেগ এ এক সঙ্গীত। অপব্ব জীবনসঙ্গীতের নব মচ্ছিনার মত মাদকতাময়। [ ৫ই ফেব্রুয়ারী, ১৯২৮ ৷৷ কয়দিন ধরে ক্ৰমাগত জঙ্গলের পথে ঘোড়া নিয়ে বেরই। উপরি উপরি দদিন পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম-সেদিন বড় কুন্ডীটার কাছে গিয়ে পথ হারানোতে রাদ মিত্ৰ পথ দেখিয়ে আনে। আর একদিন লোধাইটােলার রাস্তা না খাঁজে পেয়ে গভীর জগুগলের মধ্যে সড়ি পথ বেয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে কালামন্ডলের বাড়ীর কাছে এসে পড়েছিলাম-সে পথ দেখিয়ে আনে। আজ রামজোতকে সঙ্গে নিয়ে নারায়ণপরে দামড়ীকুন্ডীর ফসল দেখতে যাই । লছমীপর ঘাট পৰ্য্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে মানষিসমান উচ্চ কাশজঙ্গলের মধ্যে সড়িপথ বেয়ে কুন্ডীর ধারে যখন এলাম, তখন নিজজন জঙ্গলের মাথায় পােবদিকে একটিমাত্র সন্ধ্যাতারা। উঠেছে। ওঃ, কি ঘন নিতজান জঙ্গলটা! শািন্ধ উচু বালিয়াড়ি ও কাশের বন। ফিরে আসতে আসতে বেশ লাগল। দ’ধারে মানষের গতিবিহীন নিতজান কাশ-ঝাউ-এর বন। শকিনো কাশ-জঙ্গলের গন্ধে ভরপর, সোঁদা সোঁদা, বেশ লাগে। মাথার ওপরে তারা এখানে ওখানে—এখানে ওখানে উচু-নীচু ঢিবি, বালিয়াড়ি-অন্ধকার। বিশাল নিজজনতা, যেন চারপাশের জঙ্গলে আকাশের নক্ষত্র-জগৎ তার রাজত্ব বিস্তার করেছে—Vast wilderness!..তার মধ্যে ঘোড়ায় আমরা দটি প্ৰাণী—ঘোড়াটা পথ দেখতে না পেয়ে টক্কর খাচ্ছে। গভীর জঙ্গলের দিকে কোনো সাড়া নেই, শব্দ নেই—কোনো কেনো জয়গায় জঙ্গল খাব ঘন নয় । চকচকে বালি, এখানে ওখানে বন-ঝাউ-এর ঝোপ-উচু-নীচু, পিছনে কাশ-জঙ্গলের এই জঙ্গলের জীবন নিয়ে একটা কিছ লিখবো-একটা কঠিন শোষ্যপণে গতিশীল, ব্রাত্য জীবনের ছবি। এই বন, নিজজনতা, ঘোড়ায় চড়া, পথ হারানো-- অন্ধকার-এই নিজনে জঙ্গলের মধ্যে খবড়ী বেধে থাকা। মাঝে মাঝে যেমন আজি গভীর বনের নিজনিতা ভেদ করে ষে সড়িপথটা ভিটেটােলার বাথানের দিকে চলে GS