পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিকেলে আমরা কাঁচিকাটার পলের পথে অনেক দর। পৰ্যন্ত বেড়াতে গেলাম। নীল মেঘে সারা আকাশ জড়ে ছিল—কাল স্নান করে ফিরবার পথে শিমল গাছটার ওদিকে আউশ ধানের ক্ষেতের ওপরকার নীল আকাশ দেখে আমি মন্ধে হয়ে গিয়েছিলাম—আমনি মনের ভাব বিকেলেও হয়েছিল। আরামডাঙ্গার ওপারে সেই খাবরাপোতার দিকের আকাশে একটা নীল। পিঙ্গল বণ্য-শ্ৰী, সয্যে বোধ হয় অস্ত যাচ্ছিল, আমরা কিন্তু পেয়ারা গাছটা খাঁজে পাচ্ছিলাম না—আমি আর কালো কত খাঁজলাম, আরামডাঙ্গার পথে মরগাঙের ধারে সেই পেয়ারা গাছ যে কোথায় গেল! সন্ধ্যার কিছ আগে কুঠির মাঠে একটা ঝোপেঘেরা নতুন জায়গা আবিস্কার করা গেল-এদিকটায়। কখনো আসি নি—এমন নিভৃত স্থানটা, খাব আনন্দে নদীতে সাঁতার দিলাম। এবার বারাকপরে চমৎকার ছটিটা কাটল। সমস্ত ছটিটাই তো এখানে রয়েচি । আর বছর এখানে ১o ॥১১ দিন মাত্র ছিলাম-বনগাঁয়ে ছিলাম বেশীদিন। এবার এখান থেকে কোথাও যাই নি। এখান থেকে যেতে মনও নেই। কলকাতার জীবনটা যেন ভুলে যেতে বসেচি। কাল বিকেলে ঘন কালো মেঘ করে বন্টি এল। আমি আর কালো বলিষ্ট মাথায় বেলেডাঙ্গার পল পৰ্য্যন্ত বেড়াতে গেলাম। ঝোপঝাপ ভিজে কেমন হয়ে গিয়েচে —গাছপালার গাড়ির রং কালো—ডালপাতা থেকে জল ঝরে পড়ার শব্দ। তারপরে নদীর জলে সনান করতে নােমলাম—সাঁতার দিয়ে বাঁধােল। পয্যন্ত গেলাম। সাঁতার দিয়ে এত আনন্দ পাই নি কোনদিন এবারকার গরমের ছটির আগে। কুঠীর মাঠের একটা নিভৃত স্থানে চাপ করে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম—মাথার ওপর কালো মেঘ উড়ে যাচ্চে —দিক থেকে দিগন্তব্যাপী বিদ্যুতের শিখা-শাধন চারিদিকে বান্টির শব্দ-গাছে পাতায়, ডালপালায় ঝোড়ো হাওয়া বইচে--নিজজন প্রান্তরের মধ্যে একা দাঁড়িয়ে থাকার সে অনভূতির তুলনা হয় না। তার প্রকাশের ভাষাও নেই—যা খাব ঘনিষ্ঠ, খােব আপনা, তাকে কি আর প্রকাশ করা যায় ? আজ বিকেলে বহদিন পরে ভারী সন্দের রাঙা রোদ উঠল। বাঁধালের কাছে নাইতে নেমে মােঝ-জলে গিয়ে ওপারের একটা সাঁইবাবলা গাছের ওপর রোদের খেলা দেখছিলাম-কি অদভুত ধরনের ইন্দ্ৰনীল রং-এর আকাশ, আর কি অপব সোনার রং রোদের।...সকলের চেয়ে সেই সাঁইবাবলা গাছের বাঁকা ডালপালা ও ক্ষদে ক্ষাদে সবজি পাতার ওপর সোনার রংয়ের রোদের খেলা।.তারই পাশে ওপরের কদম্পৰ্বগাছটাতে বড় বড় কুড়ি দেখা দিয়েচে. শ্রাবণের প্রথমেই ফল্লিপক্ষপসম্পভারে নতশােখনীপতরটি বিষাদিনের প্রতীক স্বরপ ওই সবজি উলখেড়ের মাঠে সর্বমহিমায় বিরাজ করবে-বষার ঢল নেমে ইছামতী বেড়ে ওর মািল পৰ্যন্ত উঠবে, ঝরা কেশররাজি ঘোলাজলের খরস্রোতে ভেসে চলে যাবে...উলবেন আরও বাড়বে...আমি তখন থাকবো। কলকাতায়, সে দশ্য দেখতে আসবো না। কাল সকালে এখান থেকে যাবো, আজই এখানে থাকার শেষ দিন এ বছরের মতো। এবার ছটিটা কাটল বেশ—কি প্রকৃতির দিক থেকে, কি মানষের দিক থেকে, অদভুত ভাবে ছটিটা উপভোগ করা গেল এবার। কলকাতায় থাকলে আমার যে আফ্রিকা দেখবার ইচ্ছে হয়, পাহাড় জঙগল দেখবার ইচ্ছে হয়—এখানে দীঘদিন কাটালে। কিন্তু আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। গাছপালায়, নীল আকাশে, নদীর ԳՀ