পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তারপর গেলাম কুঠীর মাঠে বেড়াতে। যেতে যেতে দেখি নদীর ধারে মাধবপরের চরের গাছপালার গায়ে মেঘে চাপা হলদে রোদ পড়েচে-তার নিছক সৌন্দয্য আমায় মগধ, অভিভূত করলে। বেলা সাড়ে ছ-টা হবে, সন্ধ্যার দেরি নেই, সেই শান্ত গ্রীল্ডেমর অপরাহে উষ্ণমন্ডলের বনপ্রকৃতি, সােয্য, আকাশ, নদী, মাঠ, তার সমস্ত ইন্দ্রজাল, সমস্ত রপ-বিভব আমার চোখের সামনে মেলে ধরেচে। শািন্ধ, শিমল গাছের ডালগলোর অাঁকা-বাঁকা সৌন্দৰ্য্যময় রােপ, মেঘপৰ্ব্বতের পাশ দিয়ে বলাকা সারির ভেসে যাওয়া, শধই বনফলের দেবলোকের দলনি, আর বন্যপাখীর গান। কতবার দেখোঁচি, আজ বত্ৰিশ বছর ধরে দেখে আসচি। কিন্তু এরা কখনো পরোনো হোলো না। আমার কাছে। কখনও যেন হয়ও না, এই প্রার্থনা করি, এদের আসন যেন মত্যুেঞ্জয় হয়। আমার জীবনে। অতি ভয়ানক দায্যোগ, ভয়ানক বর্ষা। আজ ক-দিন চলেচে এমন। খানা ডোবা সব ভত্তি, জল থৈ থৈ করচে। এমন ভয়ানক বর্ষা জ্যৈষ্ঠমাসে দেখেছিলাম কেবল সেইবার, যেবার কলকাতা থেকে আবার ফিরে গেলাম বেলাদের তত্ত্ব নিয়ে, যেবার খাঁকুর সঙ্গে প্রথম আলাপ হয়, ১৯৩২ সালে। তারপর কত পরিবত্তনই না হয়ে গেল জীবনে! ১৯৩২ সালের সেই সময়ের এবং ১৯৩৬ সালের এই আমিতে বহন তফাৎ হয়ে গিয়েচে । বিলবিলের ডোবাতে ব্যাঙৰ ডাক চে। বাধো, কেতো এরা এই ভয়ানক দিযোগ অগ্রাহ্য করে ভিজতে ভিজতে আমি কুড়িয়ে বেড়াচ্চে। সাবি ওদের বাড়ি থেকে বিড়ি নিয়ে এল আমার জন্যে, কারণ ওবেলা ওর ভাইকে বলেছিলাম। এনে দিতে। মনোরমা আবার দটাে কলমের আমি এনেছিল। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গলপ করলে। আমি পাঁচীর বাড়ি গেলাম মাংসের ভাগ নিতে, কারণ ওখানে পঠিা কাটা হয়েচে সকালে। পাঁচী চা করে দিলে, শশীভুর অসখের জন্যে অনেক দঃখ করলে। সবাই ওকে ঘণা করে আমাদের গাঁয়ে। কিন্তু আমি দেখি ও ঘণার পাত্রী নয়, আনকম্পপার পাত্ৰী। বদ্ধ স্বামীর সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছিল, তখন ওর বয়েস ছিল মোটে তের বছর-কি বা বঝােত বিয়ের ? সে স্বামী মারা গেল, তখন ওর বয়েস বছর পনেরো। ওদের ওই গরীব সংসার, ভাইগলো অপদাৰ্থ, কেউ এক পয়সা রোজগার করে না। ভাইয়ের ছেলেমেয়োগলো একবেলা খায়, একবেলা খায় না। ওদের এই দঃখ ঘাঁচোতে ও এই কাজ করেচে। কিনা তাই বা কে জানে ? কারণ হরিপদ দাদার টাকা আছে সবাই জানে। ও আজ কাঁদতে কাঁদতে সে কথার কিছ আভাস দিলে। এই ব্যাপারের পর ওর সঙ্গে এই প্রথম আমি দেখা করলাম,-যতটা খারাপ লোকে ওকে মনে করে, আমি ততটা ভাবতে পারলাম না। তবে একটা কথা ঠিকই যে, সমাজের পক্ষে এই আদর্শটা বড় খারাপ। গ্রামের বাইরে গিয়ে যা খশি কর বাপ, গ্রামের মধ্যে কেন ? গহধমের আদশ ক্ষন্নি করে লাভ কি ? আবার সজোরে বান্টি এল। তারপর বেলা পাঁচটা থেকে কি ভীষণ ঝড় উপস্থিত হোল! গাছপালায় বোধে ক্ৰমবদ্ধমান ঝটিকার সে কি ভীষণ শব্দ! আমি ভাবলাম যে রকম কান্ড, একটা সাইক্লোন না হয়ে আর যায় না। গতিক সেই রকমই দেখাতে লাগল বটে। সন্ধ্যার আগে এমন ভয়ানক বাড়ল যে আমি আর ঘরে থাকতে না পেরে বাঁশবনের পথ দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম নদীর দিকে। দেখব ঝড়ের দশ্যটা। আমাদের বাড়ি যেতে বড় একটা বশি পড়েচে-পাড়ার শ্যামাচরণ দাদাদের বাগানেও বড় বশি পড়েচে । গাছপালা, 8O