পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করে সেখান থেকে বার হই। ওরা আবার একটি জলযোগ করালে, কিছুতেই ছাড়লে না। আবার রাত্রেও থাকতে বললে। আমি অবিশ্যি তাদের সে অন রোধ রাখতে পারলাম না। গোবরাপরের বাজারের কাছে এসে দেখি মণীন্দ্র চাটিয্যে যাচ্ছেন। মণীন্দ্ৰবাব প্রথমে আমায় চিনতে পারেন নি, নাম বলতে চিনতে পারলেন, বললেন-চল আমার বাড়ি। আমি বললাম-বাড়ি গিয়ে তো থাকতে পারব না, সতরাং গিয়ে কোন লাভ নেই। আপনি কেমন আছেন, বলন। তারপর দী-জনে পথে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ গলপ করালাম। মণীন্দ্ৰবাব এ অঞ্চলের মধ্যে একজন মানষের মত মানষ। অমন উদারহাদয় পরোপকারী, সদাশয় বদ্ধ। এ সব দেশে নেই। আমি ও’র কাছে গারতের অপরাধে অপরাধী। সে কথা এখানে আর ওঠাতে চাই নে। তিনিও সে বিষয়ের কোন উল্লেখ করলেন না। বললাম, শনিবারে আসতেই হবে। আমাদের এখানে উপেন ভটচাজের মেয়ের বিয়েতে, সেদিন আবার কথাবাত্তা হবে। আজ আসি। আর কোথাও দাঁড়ালম না। সােয্য হেলে পড়েচে। রোদ নিস্তেজ হয়ে আসচে। আমায় যেতে হবে এখনও সাত মাইল পথ। কেউটে পাড়ার পথে এক বাড়ী জিজ্ঞেস করলে-বাব, এত রোদে বেরিয়েচ 《エ ? বললাম-- যাব অনেকদর পথ। বাড়ীটি টিকে বেচিতে যাচ্চে গোবরাপরের বাজারে। মোল্লাহাটির খেয়া যখন পার হই, তখন সায্য হেলে পড়েচে । মোল্লাহাটির হাট বসেচে, আজ আর-বছরের মত হাটে গেলাম। খাব আমের আমদানি। বেলা গিয়েচে দেখে বেশীক্ষণ দাঁড়াতে পারলাম না। মোল্লাহাটি থেকে খাব রাপোতা পসািন্ত আসতে রোদটকু একেবারেই গেল। কিন্তু পথের পাশের আরামিডাওগার খড়ের মাঠের দশ্য দেখে মনে হোল, আমাদের এ অঞ্চলটি সন্দর বেশী। এত নদী বাঁওডের সমাবেশ অন্যত্র নেই। আইনদি মন্ডলের বাড়ির পিছনে সেই বাঁকে এসে খানিকটা বসে বিশ্রাম করি। এই জায়গাটা বড় ভাল লাগে আমার। মর্যাগাঙ, চক্রবর্তত্তে ঘরে গিয়েচে, বাঁশবনের শীষ। অপরাহের ছায়ায় আর নীল আকাশের তলায় বেশ দেখাচ্চে। পল পার হয়ে এসে দেখি গঙগাচরণের দোকানে তালা, দোকান নাকি উঠে গিয়েচে সেন্টশনের ধারে। কুঠীর মাঠের পথ দিয়ে ঠিক সন্ধ্যার সময় বাডি পৌছই। খাদরা আসে নি, আসবার কথা ছিল কাল। উনার চিঠি এসেচে, দেখি খাটের ওপরে পড়ে আছে। চার বছর পরে ওর খবর পেলাম। আবার বান্টি নামল, খািব ঠান্ডা পড়ল। কিন্তু কি জানি। সারারাত আমার ভাল ঘািম হোল না। শেষ রাত্রের দিকে একটা ঘািম এল। এসেই উষার চিঠি পেলাম, আর একখানা হাওড়ার রমেন ভট্টাচায্যের। তার পত্ৰখানার উত্তর দিতে হবে। উষা এসেচে। কলকাতায় বহদিন পরে, এর মধ্যে একদিন গিয়ে দেখা করতে হবে। একটা শিমল গাছের গাড়িতে বসে কত কথা ভাবলাম। বাল্যে ওই সব বাদলার দিনে কেমন নৌকো বেয়ে একা বেডাতিম, ওদিকে চালাতে পোতার বাঁকি চটকা তলার খালের নাম রেখেছিলাম Oystcrbrook (অসন্টারব্ৰক)-তখন সমদ্রািন্দ্রমণের নানা বই পড়তাম, সব্বদা সেই স্বপন দেখতুম। সেই সমদ্র ও আমাদের এই ছোট ইছামতী, তার জল একই কালো জল। সন্ধ্যায় একটা তারা উঠিল মাধবপরের নিজজন চােরর একটা অতি সন্দর তরণ সাঁই-বাবলা গাছের মাথায়। কত অদ্ভুত চিন্তা মনে আসে তারা 8Wy