পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যেমনি, নামতেও তেমনি। বেলা সাড়ে পাঁচটার সময় নীচে নামলম বটে, কিন্তু নামলিম কোথায় ? বনের মধ্যেই। বনের ছায়া নিবিড়তার হয়ে সান্ধ্য অন্ধকারে মিশে যাওয়ার উপক্রম হয়েচে। ফরেস্ট গাডী বলচে, হািজর হাতী বেরবে, জলদি চলন। কিন্তু বল্লেই তা হয় না। আরও আড়াই মাইল হেটে তবে আমাদের মোটর পয্যন্ত পৌছবো। মোটর পয্যন্ত পৌছতে সন্ধ্যা হোল। হঠাৎ গান্ড বল্লে, হাতী ! হাতী ! চেয়ে দেখি উপত্যকার ওপারে পাহাড়ের গায়ের বনে রাঙাধিলোমাখা হাতী একটা গাছের তলায় চপ করে দাঁড়িয়ে। তখন সন্ধ্যা, ভাল দেখা যায় না-কেউ বলে হাতি, কেউ বলে না। আমরা মোটরের ভোপ বাজাতেই দেখলাম, রাঙাধিলোমাখা জিনিসটি গাছতলা থেকে সরে গেল। সতরাং নিশ্চয়ই হাতী। শাকাচতুদর্শীর অপব্ব জ্যোৎসনা উঠলো তখন আমরা পাব্বিত্য কোইনা নদীর উপলা সতীর্ণ তীরে পৌছে গিয়েছি। দধারের নিবিড় অরণ্যানীর মধ্যে দিয়ে কলকল তানে কোইনা নদী বয়ে চলেচে। বল্লম, চা খাওয়া যাক। চা আছে, চিনি আছে, দধি নেই। আগন করা গেল হাতীর ভয়ে। বাংলো আরও ২ মাইল দরে। ডালপালার আগনে কেটলিতে জল চড়িয়ে দেওয়া হোল। যেদিকে চাই সেদিকেই ঝিল্লীমখর বনানী। জ্যোৎস্নার্সনাত প্রাচীর বনস্পতিশ্রেণী ধ্যানমগ্ন ঋষিদের মত শান্ত সমাহিত— জন্মমরণভীতিভ্ৰংশ কোন মহাদেবতার উপাসনায় বিভোর। জয় হোক সে দেবতার, যাঁর কারণায় আজ আমার মত দরিদ্রের এ অপরােপ বনস্থলী দর্শনের সংযোগ ঘটলো। তাঁরই শব্দহীন বাণী এই বনানীর নিশীথ নিস্তব্ধতার মধ্যে প্রহরে প্রহরে মােখরিত হয়ে উঠচে। এই পৰ্যন্ত লিখে বেলা সাড়ে পাঁচটার পরে সিংহ, আমি ও গন্তু বনের পথে বেড়িয়ে এলাম। আজ আবার প্রতিপদ, চাঁদ উঠতে দেড় ঘণ্টা দেরি। বনানীর চেহারা দেখে অন্ধকারে আমার বড় ভয় হোল ফিরবার পথে। আমি বলি, চলন, হাতী বেরবে। আর ঠিক সন্ধ্যায় কী ক্যাঁ শব্দে কি ময়রই ডাকচে বনে। এদিকে একটা ডাকে, ওদিকে গভীর বনে একটা তার উত্তর দেয়—ওদিকে আর একটা ডাকে, অন্যদিক থেকে তার উত্তর আসে, যেন পাল্লা দিয়ে ডাকাডাকি চলেচে। বাংলোতে ফিরে এসে দেখি একদল হো নরনারী হো নাচ দেখাতে এসে বসে আছে। তারা রাত দশটা পৰ্যন্ত নাচলো, মেয়ে পর্যন্য একসঙ্গে বেশ নাচলে। দ্য টাকা বিকশিশ পেলে। এইখানে কালও আসবো। পরশ, যাবো ১৫ মাইল বনপথে তিরিশপোখী। সেখান থেকে ছোটনাগরা, তারপর সলাই, সেখান থেকে Ankula waterfalls দেখতে যাবো গভীর বনের মধ্যে ২২ মাইল। ১৬ দিনের টাের প্রোগ্রাম আছে। তবে বড় ভীষণ শীত পড়েচে । থালকোবাদ বাংলো, যেখানে বসে লিখচি, এর উচ্চতা ১৮৩০ ফােট। তিরিশাপোখি ১৯৭৫ ফিট, এত উচ্চ স্থান, বনে ঘেরা-৪০০ বগমাইল গভীর অরণ্যের মধ্যে, সতরাং শীত তো হবেই। Ankula waterfalls নাকি একটি চমৎকার দশ্য, মিঃ সিং বলছিলেন। এদিকে চাল, ৪ সের টাকায়-অবিশ্যি এ বনে নয়। এখানে লোকালয় নেই-গায়া নামক সন্থানের বাজারে দেখে এসেচি। বোনাইগড় সেন্টটে ৬ সের টাকায়, সেখান থেকে অনেকে বনপথে চালি লকিয়ে আনতে যায়—কারণ সেন্টট থেকে বার করে আনবার জো নেই। ওখানে কেমন ? আপনি কেমন আছেন ? মিতে কোথায় ? আপনাদের কথা মনে হয় বড়। কালও সন্ধ্যার অন্ধকারে অরণ্যপথে বেড়াবার সময় ভাবছিলাম। এতক্ষণ দাির বনগ্রামের 6a