পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বসে। বিজয়বাবকে বল্লাম-রাজকুমার ভড় জীবনে বড় বন্ধ ছিল, তার জন্যেই এখান থেকে যাওয়া, সে না থাকলে হয়তো এতদিন পরে এখনও জাঙ্গিপাড়ার সম্পন্ন গহস্থ দুয়ে বসে থাকতাম। পরদিন সকালে উঠে ওদের পকুরপাড়ে সেই উচ, জায়গাটি দেখে এলাম-একটা বড় তেতুিল গাছ আছে সেখানে। বহদিন আগে চট্টগ্রাম জেটিতে বসে এই জায়গাটার কথা ভাবতাম। হঠাৎ যে আজ এখানে আসবে-জাঙ্গিপাড়ায়-এত জায়গা থাকতে তা কি কেউ কখনও ভেবেছিল ? থানার পাশ দিয়ে পথটায় হেটে যাবার সময় পরোনো দিনের সব কথা, সব মনের ভাব মনে আসছিল। যে ছোট ঘরটাতে ডাকঘর ছিল, চিঠিপত্রের আশায় বসে থাকতাম—সে ঘরটা এখনও সেই রকমই আছে। আমার ছোট্ট ঘরটাতেও গিয়ে দেখলাম—তবে ঘরটা বন্ধ। পদ্মপরিকুরের ঘাটের দিকে বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে রইলাম। দাপরে আমার ছাত্র গজেনের বাড়িতে গেলাম। ওর ভাগনী পরিবেশন করলে— তার আবার স্বামী এসেচে, বেচারী ঘোমটা দিয়ে লণ্ডজাতেই জড়সড়। ওদের মাটির ঘরটা কেমন চমৎকার সাজানো-মাটির মাছ, খেলনা, পতুল, পাতির মালা ইত্যাদি কুলঙ্গিতে বসানো। দটি তরণী লাজক মেয়ে আনাগোনা করচে ঘরে ও বাইরেখাঁটি পাড়াগাঁয়ের গহস্থালি। এক জায়গায় অনেক গাঁদা ফল ফটে আছে। একজনের বাগান এটা। সে তার মনের সৌন্দৰ্য্যজ্ঞান প্রকাশ করেচে। ফলের গাছ পাতে। এও এক ধরণের কাব্য রচনা। মনের সৌন্দয্য যাতেই যে ভাবেই প্ৰকাশ করা যায়। তাই তো শিলপ-সেই হিসাবে উদ্যান-রচনা একটা বড় শিল্প। ভগবান বোধহয় নিজেকে প্রকাশ করেচেন বিশব-রচনার মধ্যে দিয়ে। Analogyটা হয়তো ঠিক হয় না, কিন্তু ভাবতে বেশ লাগে। আর কতটা কথা ভাবছিলাম, যাকে ভালবাসা যায় বেশী, তাকে দঃখ দিলে ভালবাসা বন্ধিত হয়, আদর দিলে তত হয় না। এ পরীক্ষিত সত্য। এতে যে সন্দেহ করে, সে ভালবাসার ব্যাপার কিছ জানে না। যাকে ভালবাসো, তাকে খাব আদর দিও না, ভালবাসা কমে যাবে। মাঝে মাঝে তার প্রতি নিৰ্ম্মঠর হয়ো, ভালবাসার সঙ্গে কারণা ও অন্যকম্পপা মিশে ভালবাসার ভিত্তি দঢ়তর হবে। ভগবান যাকে বেশী ভালবাসেন, তাকেই কি বেশী কভাট দেন—তবে কি এই বাঝতে হবে ? ? আজ বিকেলে বিশ্ৰী ঝড়বভিট, একঘেয়ে বাদলা। স্কুলের ছেলেদের নিয়ে মিউজিয়মে স্বাস্থ্য-প্রদর্শনী দেখতে গিয়েচি। একদল ঢাকেচে একদল ঢাকতে পারেনি, তাই নিয়ে ওখানকার সেক্রেটারীর সঙ্গে ভীষণ গোলমাল-ছেলেরা হাতাহাতি করতে যায়। আমি তাদের থামিয়ে দিই। সাহেব আমার নাম লিখে নিলে--অর্থাৎ আমার নামে কি যেন রিপোর্ট করবে। করগে যা রিপোর্ট, তোর রিপোর্টকে আমি ভয় করিনে। ওয়াছেল “মোল্লার দোকানে জামা-কাপড় কিনতে গিয়ে আটকে গেলাম বন্টিতে। তারপর পরেশ খড়ের সঙ্গে দেখা করে ফিরি। কদিনই বন্ড ছাটোছটি হচ্চে, কাল পরী যাব। ঝড়বটি পড়ে গেছে, তা কি করব, উপায় নেই। এখন না গেলে ছটি কৈ আর ? কাল গিয়েছিলাম রাজপরে বিকেলবেলা। নগেন বাগচীদের পকুরঘাটে সন্ধ্যায় সকলে দাঁড়িয়ে কতকটা মনে হল -অনেকদিন আগে এদের এই বাড়িতেই ছিলাম। এই পাকুরঘাটে মা নাইতেন। সেই রকমেই সব আছে বাড়িটার। কিন্তু এই ১৩ ॥১৪ বছরে আমার জীবনে কি পরিবত্তন RR