পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অাজ ! কল্যাণী.ওর কথাও মনে হয়। এরা সব চলে গেল, তাই ভগবান যেন এই স্নেহময়ী মেয়েটিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আবার দ’ শনিবার পরে তবে ওর সঙ্গে দেখা হবে। জন্মাষ্টমীর ছটিতে ঘাটশিলা যাব। সপ্রভাকে লিখোঁচি সেদিন সেখানে পত্র দিতে । সন্ধ্যার ট্রেনে চলে আসব। শাট থেকে বন্ধ মসলমানেরা ফিরচে আমাদের গাঁয়ে। কারো মাথায় ধামা, কারো মাথায় ঝড়ি। সবাই জিগ্যেস করে-বাব কবে আলেন ? আরামডাঙার আবদল, নটর সিয়া—সবাই। গোপালনগর স্টেশনে অনেকক্ষণ বসলাম। কত নক্ষত্র উঠচে—আজি সারাদিন পরিপর্ণ শরতের রৌদ্র। বনগাঁয়ের কাছে ট্রেন আসতেই কল্যাণীর কথা মনে হল। একবার মনে হল নেমে ওর সঙ্গে দেখা করে কাল ট্রেনে যাব। মেসে এসে সেবার পত্ৰ পেলাম। এবার ভাল লেগেচে বাঁওড়ের ধারের বটতলায় বসা, কুঠীর মাঠে ছায়াস্নিগ্ধ ঝোপটি, মরগাঙের ধার, এবেলায় বনাসিম ঝোপের ছায়ায় ঘাসের মাঠে বসা, সাপ্রভার চিঠি পড়া, কল্যাণী ও খাকুর চিন্তা। আর কালকার রাত্রের সেই ফটফটে জ্যোৎস্না। কাল, কত রাত পৰ্য্যন্ত চড়কতলার মাঠে ছিলাম ; ফণিকাকা, গজন, কালো পাঁচ, ফকিরীচাঁদ সবাই গলপ করলাম। কাল রাত্রে জেলেপাড়ায় কৃষ্ণ-যাত্রা-হবার কথা ছিল, সকলে জিগ্যেস করচে-কখন বসবে যাত্ৰা ? ক্ষদ্র জগতের ক্ষদ্র আমোদ-প্রমোদ। খব রুম্ ঝুঁকি যাহা হয়েছিল—দেখতে পেলে না বলে আজ সকালে পিসীমা ও নদিদির प्रश्च ! খাঁকুর সমিতি সারা বারাকপরেকে, তার মাঠ, ঘাট, নদীর তীর সব আচ্ছন্ন করে রেখেচে—এবার গিয়ে বাবলাম। নদীর ধারে সপ্রভার, কারণ চিরকাল নদীর ধারে বসে সপ্রভার পত্র পড়া আমার অভ্যাস। অনেকদিন পরে ভাদ্র মাসে বাড়ি গিয়েছিলাম। ভারি আনন্দ নিয়ে ফিরলাম। কালী এসেচে, তাই আরও আনন্দ। সপ্রভার অমন সন্দের পত্ৰখানা সে আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিলে। যে পথিবীতে সংপ্ৰভা আছে, সেখানে আমার ভাবনা কি ? তারপর কল্যাণী যেখানে আছে, সেখানেই বা ভাবনা কি ? আমি যেটাকে মটরলতা বলতুম, কাল বেলেডাঙা যেতে বটতলার পথে কালী ওটাকে বল্লে-বড় গোয়ালে। লতা। কিন্তু বড় গোয়ালে। লতার ফল হয়। সাদা, আর এক রকমের লতা আছে, খাঁজকাটা আঙরের পাতার মত দেখতে, আঙরের মতই থোলো বাঁধে। আমাদের বাড়ির পেছনে বাঁশবাগানটার পথে কাল বিকেলে ঘাম ভেঙে উঠে যাচ্ছি, তখন মনে কি এক অদভুত অনভূতি হল। যেন কি সব শেষ হয়ে গেছে, কি যাচ্চে, এই ধরণের একটা উদাস মনোভাব। প্রতিবারই এই সস্থানটি আমাদের মনে অদ্ভুত ভাব জাগায়। বঙ্গবাসীর কথা, বাবার কথা, চীন ভ্রমণের কথা, কত কি মনে আনে। দরিদ্র সংসারে তালের বড়া খাওয়ার দিন সে কি উৎসব.সেও এই ভাদ্র মাসে । পিসীমা কাল তালের বড়া খাইয়েছিলেন। কিন্তু। ১৯৩৭ সালেও ভাদ্র মাসে জন্মান্টমীতে বাড়ি গিয়েছিলাম, তখনও খকু গ্রামে छ्ळ व्षा । আমাদের গ্রামের ক্ষদ্র জগৎটাতে ওরা বেশ আছে, কৃষ্ণ-যাত্রা শনিচে, দলাদলি করচে, গোপালনগরের হাট করছে, নদীতে ছিপ নিয়ে মাছ ধরচে, চড়কতলায় বসে রাত্রে আন্ডা দিচে-বেশ আছে। SOS