খেতে গেলে চাকর আমায় বললে, বাবা, আপনি সাহেবের খবর কি জিজ্ঞেস করছিলেন। উনি এখানে অনেকদিন আছেন, আমরা ওঁর টিকিট বদলে আনি আপিস থেকে। তিনদিন থাকবার পরে টিকিট না বদলালে এখানে থাকতে দেবার নিয়ম নেই। একটা কথা বলচি বাব, উনি এতদিন আছেন, কখনও কোনো চিঠি আসেনি ওঁর নামে ! কেউ নেই। বাবা, থাকলে আর চিঠি দেয় না! আমি ধমক দিয়ে চাকরিটাকে চাপ করলাম। তার অত কথার দরকার কি। একদিন দেখি ভদ্রলোক গ্যেটের ফাউস্ট-এর ইংরিজী অনাবাদ পড়ছেন। আমায় ডেকে দ-এক জায়গা শোনালেন, গোটে সম্পবন্ধে অনেক কথা বললেন। বায়রন যখন যবেক, গোটে তখন বন্ধ, বায়রনের মতো সশ্রী তরণ কবিও প্রেমিক গ্যেটের মনে কি রেখাপাত করেছিলেন প্রধানত সেই সম্পবন্ধে অনেক কথা বললেন। এই বইখানা তাঁর অত্যন্ত প্রিয়, বহবার পড়েচোন। সব্বদা সঙ্গে রাখেন। আমি তাঁর টেবিলে ফাউস্ট-খানা পড়ে থাকতে দেখলাম বিকেলেও, তখন তিনি বেরিয়ে গিয়েচোন। বই দেখে মনে হয়। ভদ্রলোকের অবস্থা ভালো নয়। বইয়ের পাতাগলো ময়লা, বাঁধানি আলগা, এত প্রিয় বই অথচ এমন অযত্নে রেখেছেন কেন ? হাতে পয়সা থাকলে কি আর বই বাঁধাতেন না ? বড় দরের কবিকে ভালোবাসে, এমন লোক দজন দেখলাম আমার ভ্রমণের মধ্যে, বরিশালের সেই শেকসপিয়ারের ভক্ত ভদ্রলোক, আর ইনি। কিন্তু দজনের মধ্যে একটা বড় তফাত রয়েছে, বরিশালের সে ভদ্রলোকের অবস্থা সচ্ছল, এমন কি তাঁকে ছোটখাটাে জমিদার বলা চলে, কিন্তু ইনি একেবারে নিঃসম্পবেল। অথচ কি অদ্ভুত কাব্যপ্রিয়তা ! যত রাত্রেই ফিরতেন, তাঁকে দেখতাম "ফাউসট'-এর কয়েকখানা পাতা না পড়ে কিছতেই ঘমোতেন না। আমি যেদিন "কুঞ্জবন প্যালেস দেখতে গেলাম দ্বিতীয় বার, সেদিন সকালবেলা ধোপা তাগাদা করতে এসে ভদ্রলোককে অনেক কড়া কথা শনিয়ে গেল দেখে আমার বড় কষ্ট হল। হিন্দ স্থানী ধোপা, সে গোস্ট-হাউসের অনেক বাবাসাহেবের কাপড় কেচেছে, এমন তাগাদা কাউকে কখনও করতে হয়নি, আজ সাত-আট দিন হাঁটাহাটি করচে, আর সে কতদিন হাঁটবে ? আমার ইচ্ছে হল। ভদ্রলোককে বলি, তাঁর কাছে না থাকে, আমার কাছ থেকে কিছ না হয় নিতে, কিন্তু তাতে যদি তিনি কিছ মনে করেন ? আগরতলায় আমার থাকবার দিন ফরিয়ে এল। কনেল মহিমচন্দ্র দেব বসন্মান মহাশয়ের দটি তরণে আত্মীয় যবকের সঙ্গে আমার খাব আলাপ হয়ে গিয়েছিল, এদের যােবক না বলে বালক বলাই সঙ্গত, কারো বয়স সতেরোর বেশি না। ওরা রোজ গোস্ট-হাউসে আসতো, গলপগজব করে চলে যাবার সময় আমায় টেনে নিয়ে যেতো তাদের সঙ্গে। একদিন ওরা বললে, চলন পিকনিক করা যাক শহরের বাইরে কোথাও আমি বললাম, পাহাড়ের দিকে যাওয়া যাকআমার গোস্ট-হাউসের সঙ্গীটি তখন ছিলেন না, রাত্রে তাঁর কাছে প্রস্তাব করতেই তিনি তখনি রাজী হয়ে গেলেন। বললেন, আমায় কি দিতে হবে ? আমরা হিসেব করে দেখেছিলাম। জন-পিছ এক টাকা করে দিলেই চমৎকার পিকনিক হয়ে যায়। সস্তার দেশ, তা ছাড়া সাদাসিদে সাধারণ জিনিস ছাড়া পাওয়াই যখন যায় না। ওঁকে সেকথা বললাম, উনি তখন বললেন, তাহলে টাকাটা আমার কাছ থেকে নিয়ে নেবেন সকালবেলা। &
পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/c/c3/%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%87_%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8_-_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%B7%E0%A6%A3_%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC.pdf/page66-1024px-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%87_%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8_-_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%B7%E0%A6%A3_%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC.pdf.jpg)