পাতা:দুনিয়ার দেনা - হেমলতা দেবী.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশের দোসর
২৭

ঋতুগুলি ভাঙ্গা পালায় যখন তখন যেখানে সেখানে এলোমেলো পা ফেলছে, গতিতে তাদের জীবন নেই আনন্দ নেই।

 সব চেয়ে দুর্দ্দশা হয়েছে সহরের মানুষগুলোর। রোগে মরে, না খেয়ে মরে, ভাঙ্গা বাড়ী মাথায় চাপা প’ড়ে মরে, ঘর নেই যার সে মাঠে দাঁড়িয়ে বর্ষায় ভিজে মরে, রৌদে পুড়ে মরে; আর মরে পাড়া প্রতিবেশীর কিল চড গুঁতোয়। গায়ে নেই জোর যে তাদের ঠেকায়, হাতে নেই অস্ত্র, যে তাদের ভাগায়;

 কুঁড়ে গুলোর চালে নেই খড় দেয়ালে নেই মাটির লেপ; ঘরের ভিতরে খালি হাঁড়ি ঠনঠন করছে। পাকা বাড়ী আগাগোড়া ফাটলে ভরা, ফাটল ফুঁড়ে মাথা তুল্‌ছে মস্ত মস্ত গাছ, তাদের মোটা মোটা শিকড়গুলো মাটি পর্য্যন্ত লম্বা। আর দেয়ালের চারদিক জুড়ে ফাটলের মধ্যে বাসা করেছে চামচিকে, ইঁদুর, আরসোলা, আর মাকড়সা।

 সহরের এই রূপটির সঙ্গে অবিকিল খাপ খেয়েছে তার রোগে জীর্ণ না খেয়ে শীর্ণ অধিবাসীগুলি। তাদের মূর্ত্তি দেখলেই মনে হবে মরণ যেন তাদের বুকের উপর খেলা করে বেড়াচ্ছে।

 এ হেন পতনোন্মুখ সহর তার মরণোন্মুখ মানুষগুলিকে নিয়ে সমুদ্রতীরে তবু কিন্তু বেঁচে আছে। নিঃশেষে তবু তার মরণ হচ্ছে না, কে জানে কেন?