পাতা:দুনিয়ার দেনা - হেমলতা দেবী.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
দুনিয়ার দেনা

 একটুখানি গিয়েই বাগান। কতকগুলো সার বাঁধা সুপুরি ও নারকেল গাছ, ঘেঁসাঘেসি বসানো কতকগুলো আম গাছের জঙ্গল, দুটো চারটে বেল, তাল, পেয়ারা গাছ এদিক ওদিক ছড়িয়ে, কিনারায় কতকগুলো বাঁশ ঝাড় আর মাঝখানে দুটো পুকুর। পুকুর দুটো একটা ডোবা বল্লেই হয়, পানায় ঢাকা এঁদো পড়া, একটার জল ভালো, তাতে একটা বাঁধানো ঘাটও আছে। পাড়া-প্রতিবেশী আট দশ ঘর হাড়ি মুচি ও চাঁড়াল। ক্রোশ খানেকের মধ্যে ভদ্রলোকের বাস নেই বল্লেই হয়। ক্বচিৎ যদি দু’একঘর দেখা যায়।

 বাগানটা বহুকালের পোড়ো, কেউ কখনো তাতে বাস করেিন। হাড়ি মুচিদের মেয়েরা, দিনের বেলা, দু-চার কলসী জল নিতে বাগানের মধ্যে যাওয়া-আসা করে—পুকুরটার জল ভাল ব’লে, সন্ধ্যার পর সেদিকে জনমানবের চলাচল নেই। লোকটা বাগানের মধ্যে ঢুকেই বল্লে, “হাঁ, এখানে আমি থাকতে পারব”। তাকে সেইখানে রেখে স্ত্রীলোকটি বাড়ী ফিরে গেল।

 কিছুক্ষণ পরে ফল, মিষ্টান্ন বোঝাই একটা চাঙ্গারী মাথায় একজন মুটে এসে বাগানে ঢুকূল। চাঙ্গারীর উপর গায়ে দেবার নূতন একখানা চাদর। মানুষটির সামনে চাঙ্গারী নামিয়ে মুটে বল্লে “মা ঠাকরুণ আপনার জন্যে পাঠিয়েছেন”। ব’লে, চাঙ্গারীটা রেখে মুটে চলে গেল।