পাতা:দুনিয়ার দেনা - হেমলতা দেবী.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
দুনিয়ার দেনা

হবে। বেঁটে খাটো কালো চেহারার মানুষটির শরীর এখনো মজবুত কত। এত বয়স কোমর একটু ভাঙ্গেনি, পিঠ একটু বাঁকেনি। কানটা কেমন করে গেছে কে জানে, চোখের দৃষ্টির তেজ এখনো খুব, দূরের জিনিষ মাঝি খুব দেখতে পায়। কানের কাছে চেঁচিয়ে বল্লে শুনতেও কিছু কিছু পায় দেখা গেছে।

 খেয়ার পারাণী তার একটি করে পয়সা। ষাট বছর মানুষ পিছু একটি পয়সা নিয়ে মাঝি খেয়া বাইছে।

 এই নদীর বুকে কত নূতন নূতন খেয়া দেখা দিল, লোপ পেল, ভাঙ্গলো, গড়ল, কালামাঝির খেয়া অটুট। চিরকাল সে এই খেয়াই বাইছে। বছর অন্তর একবার কেবল ফাটা ফুটো সেরে নেয়, তিন বছরে একবার রঙ দিয়ে এটাকে নূতন করে তোলে।

 খেয়াখানা আগে কি কালামাঝি আগে, লোকে ভেবে পায় না। এদের ছাড়াছাড়ি কেউ কখনো দেখেনি! কালামাঝিকে বুকে করে নদীর তলা থেকে হঠাৎ একদিন খেয়াখানা যেন নদীর বুকে ভেসে উঠেছে এমনি মনে হয়।

 কতকাল ধরে কত মানুষ যে এই খেয়ায় পারাপার হয়েছে কে তা গুণতে পারে? কালামাঝির মুখ খানা দেশশুদ্ধ লোকের চেনা। তার মুখ ভরা হাসি বুকভরা খুসী না দেখেছে কে, খুসী না কারছে কাকে?

 বছরখানেক ধরে একরাশ ফুল বোঝাই একটা ডালা