পাতা:দুনিয়ার দেনা - হেমলতা দেবী.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাঁঝের পাড়ি
৯৩

মাথায় নিয়ে কালামাঝির খেয়ায় ছোট্ট একটি মেয়েকে নিত্যি পারাপার হতে দেখা যায়। মেয়েটি দিব্যি ফুটফুটে সুন্দর, বয়স বছর নয়, নাম সুরভি, সবাই তাকে সুরী বলে ডাকে। সে এ পারের চিন্তে মালির মেয়ে।

 বাপের বাগানের ফুল ডালি ভরে নিয়ে রোজ সে ওপারে বেচতে যায়; দুপুরের খেয়ায় গিয়ে সাঁঝের খেয়ায় এক টাকা পাঁচসিকে নিয়ে ফেরে।

 প্রতিদিন আসতে যেতে সুরীর সঙ্গে কালামাঝি খুব ভাব হয়েছে। মাঝি সুরীকে খুব ভাল বাসে; সুরীও তাকে কম ভালবাসে না। মাঝি কানে শোনে না সুরী তবু চেঁচিয়ে চেঁচিয় তার সঙ্গে কত কথাই কয়! পাড়ার মেয়েদের কত গল্প, পুতুল খেলার, ঘাটে নাইতে যাওয়ার গল্প, বাপের বাগানে কত রকমের ফুল গাছ আছে কত করে সে গাছের যত্ন নিতে হয়, তার বাপ কত নূতন রকমের মালা গাঁথতে জানে, মা কেমন সুন্দর ফুলের পাখা তৈরী করে, ঘরের চালে কটা চড়াইয়ের বাসা আছে এই রকম কত গল্পই সে করে।

 কালামাঝি কতক শুন্‌তে পায় কতক পায় না। নিজের সব মনটা জাগিয়ে সে সুরীর কথা শোনে, বুদ্ধির সবটা দিয়ে তার কথা বুঝতে চেষ্টা করে তাই কথাগুলো পুরোপুরি কানে গিয়ে না পৌঁছলেও প্রাণে গিয়ে যেন পৌঁছয় বলে বোধ হয়।