পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

 দাসী বাঁদী যারা, তারা আনারের মিষ্টকথা আর সুন্দর ব্যবহারে, সত্য সত্যই তাঁহার গোলাম হইয়া পড়িল। সকলের যুখেই একটা সন্তোষের ভাব। সকলেরই সংসারের কর্ত্তব্য কর্ম্মে উৎসাহ ও নিষ্ঠা। কাজকর্ম্ম সমস্ত যেন মন্ত্রবলে চলিতে লাগিল। আর নবাব সুজা বেগ এতদিন পরে বুঝিতে পারিলেন—নারীর মোহকরী শক্তি কতদূর। সুগুণা সুরুপসী পত্নী লাভ কত ভাগ্যের কথা। জ্বালার জীবনে স্নেহময়ী পত্নী যে শান্তির প্রস্রবণ! সুবুদ্ধিমতী কর্ত্তব্য পরায়ণা রূপসীর আদর কত মূল্যবান। শূন্য প্রাণের পূর্ণতা কোথায়? জ্বালাময় মর্ত্তে-স্বর্গের সুখ কেমন করিয়া মিলে?

 সেই প্রাসাদতুল্য অট্টালিকার দক্ষিণে একটী বহুদূর ব্যাপী পুষ্পোদ্যান। যত্নের অভাবে, তাহা যেন দিনে দিনে হীনশ্রী হইয়া পড়িতেছিল। কিন্তু আনারের সুন্দর ব্যবস্থায়, আর যত্নময় তত্ত্বাবধানে, তাহাতে একটা যেন নুতন শ্রী ফুটিয়া উঠিল। পুষ্পোদ্যানের নানাস্থলে সুন্দর মর্ম্মরবেদী, নব-প্রতিষ্ঠিত কুঞ্জবীথি। কোথায় বা কৃত্রিম প্রস্রবণ। সেই হীনশ্রী শ্মশানতুল্য উদ্যানভূমি মধ্যে যেন বসন্তের মাধুরী ফুটিয়া উঠিল।

 দুইটী মাস মাত্র সে এই গৃহের অধীশ্বরী হইয়াছে। আর ইহার মধ্যেই গৃহস্থালীর সকল দিকেই এত পরিবর্ত্তন। সত্যই সে যেন রাজরাণীর গৌরবে, নিজের অধিকৃত মহলে একাধিপত্য করিতে লাগিল। মায়াবিনীর মত কি যেন এক কুহেলী মাথা মন্ত্রশক্তিতে, সকল দিকেই সৌন্দর্য্য ফুটাইয়া তুলিল।

৯৯