পাতা:দেবদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
দেবদাস

 পিসীমা বসিতে বলিলেন, কিন্তু পার্ব্বতী ফিরিয়া আসিল। পথে রসিক পালের দোকানের কাছে তিনজন বৈষ্ণবী রসকলি পরিয়া খঞ্জনী-হাতে ভিক্ষায় চলিয়াছিল, পার্ব্বতী তাহাদিগকে ডাকিয়া বলিল, ও বোষ্টমী! তোমরা গান করতে জান?

 একজন ফিরিয়া চাহিল—জানি বৈ কি বাছা!

 তবে গাও না।

 তখন তিনজনেই ফিরিয়া দাঁড়াইল। একজন কহিল, অমনি কি গান হয় মা, ভিক্ষে দিতে হয়। চল, তোমাদের বাড়ি গিয়ে গাব।

 না, এইখানে গাও।

 পয়সা দিতে হয় যে মা!

 পার্ব্বতী আঁচল দেখাইয়া কহিল, পয়সা নেই—টাকা আছে।

 আঁচলে বাঁধা টাকা দেখিয়া তাহারা দোকান হইতে একটু দূরে গিয়া বসিল। তাহার পর খঞ্জনী বাজাইয়া তিনজনে গলা মিলাইয়া গান ধরিল। কি গান হইল, কি তাহার অর্থ—পার্ব্বতী এ-সব কিছুই বুঝিল না। ইচ্ছা করিলেও হয়ত বুঝিতে পারিত না। কিন্তু মনটি তাহার সেই নিমেষে দেবদাদার কাছে ছুটিয়া গিয়াছিল।

 গান শেষ করিয়া তাহারা কহিল, কৈ, কি ভিক্ষে দেবে দাও তো মা!

 পার্ব্বতী আঁচলের গ্রন্থি খুলিয়া টাকা তিনটা তাহাদের হাতে দিল। তিনজনেই অবাক হইয়া তাহার মুখপানে কিছুক্ষণ চাহিয়া রহিল।

 একজন বলিল, কার টাকা বাছা?

 দেবদাদার।

 সে তোমাকে মারবে না?

 পার্ব্বতী একটু ভাবিয়া কহিল, না।

 একজন কহিল, বেঁচে থাক মা!

 পার্ব্বতী হাসিয়া কহিল, তোমাদের তিনজনের বেশ ভাগে মিলেচে, না গো?

 তিনজনেই মাথা নাড়িয়া বলিল, তা মিলেচে। রাধারানী তোমার ভাল করুন। বলিয়া তাহারা আন্তরিক আশীর্বাদ করিয়া গেল, যেন এই দানশীলা ছোট মেয়েটি শাস্তি ভোগ না করে। পার্ব্বতী সেদিন সকাল সকাল বাড়ি