পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩
নারীর মূল্য

বিবাহের ছাদনা-তলায় ঢুকিতে দেওয়া হয় না—পাছে দেবীর মুখ দেখিলেও আর কেহ দেবী হইয়া পড়ে। মঙ্গল-উৎসবে দেবীর ডাক পড়ে না, দেবীর ডাক পড়ে শ্রাদ্ধের পিণ্ড রাঁধিতে।

 তার মা তাহাকে দেখিয়া হয়ত বা সহ্য করিতে পারিলেন না, অসুখে পড়িয়া মারা গেলেন। বাপ পঞ্চাশ বৎসর বয়সে ‘দায়ে পড়িয়া’ ‘নিতান্ত অনিচ্ছায়’ ‘লোকের অনুরোধ এড়াইতে না পারিয়া’ তার চেয়ে ছোট একটি মেয়েকে বিবাহ করিয়া ঘরে আনিলেন। ঘরের বিধবা মেয়ের উপর হুকুম হইয়া গেল, একটু সকাল সকাল, অর্থাৎ বেলা দশটার মধ্যে রাঁধিয়া বাড়িয়া তাহার বৌমাকে যেন খাওয়াইয়া দেওয়া হয়। না হইলে, ছোট মেয়ে হয়ত পিত্ত পড়িবে। এ-বাড়ীতে বিধবা-মেয়ে ও নববধূর মূল্য যে এক বাটখারায় ধার্য হইতে পারে না, সে কথা বোধ করি আর বুঝাইয়া বলিতে হইবে না। বাপ ত বিবাহ করিয়া আনিলেন—ইনি প্রাচীন, সম্ভ্রান্ত, টোলের অধ্যাপক, শাস্ত্রজ্ঞানেরও নাকি সীমা নাই; বিধবা-বিবাহের বিরুদ্ধে একখানা বইও লিখিয়াছেন,—কিন্তু সে যাহাই হৌক, যে লোক এক বাটীর মধ্যে বাস করিয়া ও তাহার নিজের মেয়ের চেয়ে ছোট একটি মেয়েকে পত্নীভাবে গ্রহণ করিতে পারে, সে যে কেমন করিয়া মুখে আনে, ঘরের কোণে নারীজাতিকে পূজা করি, এ আমার বুদ্ধির অগোচর। অথচ যে পুরুষ এ-রকমটি করে নাই, সে তৎক্ষণাৎ বলিয়। উঠিবে, যে করে সে করে, আমরা ত পারি না। অর্থাৎ, সে ভাবিতে চায় না, এ অবস্থায় সে নিজে কি করিবে। অবশ্য, ও দুর্ঘটনা ঘটিবার পূর্বে কাহাকেও স্বীকার করিতে বাধ্য করা যায় না; কিন্তু শতকরা নিরানব্বই জন পুরুষ যে ঠিক এমনটিই করে, তাহা নিঃসন্দেহ। এক স্ত্রী জীবিত থাকিতেও পুরুষ ঘরের মধ্যে আরও এক শত স্ত্রী আনিয়া উপস্থিত করিতে পারে, কিন্তু দ্বাদশ-বর্ষীয়া বালিকা বিধবা হইলেও তাহাকে দেবী হইতেই হইবে, এই ব্যবস্থা এ-দেশের সমস্ত নারী জাতিকে যে কত হীন, কত