পাতা:নিগ্রোজাতির কর্ম্মবীর - বিনয়কুমার সরকার (১৯১৪).pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোলামাবাদের আব্‌হাওয়া
২৩

চাপাইয়া দেওয়া হইল! কাজেই দেখিতে দেখিতে স্বাধীনতালাভের আনন্দ গোলামাবাদের মহলে মহলে গভীর দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগে পরিণত হইবে তাহাতে আর আশ্চর্য্য কি? যে স্বাধীনতারত্নের জন্য তাহারা অনেকে এতদিন অশ্রু ফেলিয়াছে, আজ যখন তাহা সত্য সত্যই তাহাদের করতলগত হইল, তখন যেন তাহারা ভাবিতে লাগিল—“ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।” অনেকের বয়স প্রায় ৭০/৮০ বৎসর। তাহারা নূতন করিয়া জীবন আরম্ভ করিতে সম্পূর্ণ অপারগ। ইহাদের পক্ষেই কষ্ট সর্ব্বাপেক্ষা বেশী। অধিকন্তু, তাহারা এত কাল মনিবদের সেবা করিয়া তাঁহাদের প্রতি সত্য সত্যই অনুরক্ত হইয়া পড়িয়াছিল— তাঁহাদের সঙ্গে আত্মীয়তার নিবিড় বন্ধন জন্মিয়াছিল। তাঁহারা যে ইহাদের আপন হইতেও আপন। তাঁহাদের পারিবারিক সুখে ইহারা যে কতই না সুখ অনুভব করিয়াছে এবং দুঃখে কতই না কষ্ট ভোগ করিয়াছে। যাঁহাদের সঙ্গে বসবাস করিয়া অর্দ্ধ শতাব্দী কাটিয়াছে, তাঁহাদের মায়া যে কোন মতেই ছাড়ে না। সমস্ত গোলামাবাদের আব্‌হাওয়াতেই তাহাদের জীবন পুষ্ট হইয়াছে। তাহাদের হৃদয়ের শিকড়গুলি প্রভুর পুত্র-কন্যায় এবং মনিবের সম্পত্তিতে দৃঢ়ভাবেই প্রবেশ করিয়াছে। সেই হৃদয়ের সম্বন্ধ একদিনে ছিঁড়িয়া ফেলা কি সম্ভবপর? সেই প্রেমের বন্ধন ছিন্ন করিলে কি তাহারা বাঁচিতে পারে?