পাতা:নিগ্রোজাতির কর্ম্মবীর - বিনয়কুমার সরকার (১৯১৪).pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার বাল্য-জীবন
৩১

একদিন করিয়া শয়ন ভোজন করিবে। এইরূপে চাঁদা করিয়া খাওয়ানব্যবস্থা শিক্ষকের পক্ষে মন্দ নয়। কারণ যেদিন যে পরিবারের পালা সেদিন তাহারা শিক্ষককে যথাসম্ভব ‘চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয়’ না দিয়া থাকিতে পারে কি? আমার মনে আছে—আমি আমাদের পরিবারের সেই ‘মাষ্টারের দিন’ কবে আসিবে ভাবিয়া সুখী হইতাম। সেই দিন ফাঁকতালে আমারও বেশ ভাল খাদ্যই জুটিত!

 এই প্রণালীতে আর কোথায়ও বিদ্যালয় হইয়াছে কি? আমি জানি না। সমস্ত জাতিটাই যেন একটা পাঠশালা—সমস্ত গ্রামটাই যেন বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ—পাড়ার সকল লোকই যেন বিদ্যালয়ের ছাত্র, অভিভাবক, পরিচালক। সমগ্র জাতির পক্ষে বিদ্যারম্ভ ও “হাতে খড়ী” হইল। এই উপায়ে আর কোন জাতি জগতের ইতিহাসে গড়িয়া উঠিয়াছে কি?

 নিগ্রো-সমাজের কেহই এই শিক্ষার আন্দোলনে যোগদান করিতে পশ্চাৎপদ রহিল না। বৃদ্ধ, বালক, যুবা সকলেই আগ্রহের সহিত লেখাপড়া শিখিতে লাগিল। “মরিবার পূর্ব্বে যেন অন্ততঃ বাইবেল-গ্রন্থ পড়িতে পারি”—এই আকাঙ্ক্ষায় আশী বৎসরের বৃদ্ধ লোকেরাও বিদ্যালয়ে ভর্ত্তি হইল। কোনরূপে শিক্ষক পাইলেই পাঠশালা খোলা হইত। দিবাবিদ্যালয়, নৈশবিদ্যালয়, রবিবারের বিদ্যালয় ইত্যাদি নানাবিধ পাঠশালার সাহায্যে নিগ্রোপল্লীতে বর্ণ-জ্ঞান, বানান, সরল ধর্ম্ম-ব্যাখ্যা ইত্যাদি প্রচারিত হইতে লাগিল।