পাতা:নিগ্রোজাতির কর্ম্মবীর - বিনয়কুমার সরকার (১৯১৪).pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪

 আমি এই ঘটনায় একটা বড় শিক্ষা পাইয়াছিলাম। তাহা আমি চিরজীবন কাজে লাগাইতে চেষ্টা করিয়াছি। আমার মাতা কখনও লোক-দেখান বাবুগিরি বা সামাজিকতা অথবা লৌকিকতার ধার ধারিতেন না। সর্ব্বদাই নিজের আর্থিক অবস্থানুসারে তিনি গৃহস্থালী চালাইতেন। অন্যান্য অনেক নিগ্রোকে দেখিয়াছি—যাহাদের পেটে অন্ন জুটে না—কিন্তু নূতন ফ্যাশনের টুপি মাথায় দিয়া বেড়াইতে না পারিলে ঘুম হয় না! এজন্য তাহারা ঋণগ্রস্ত পর্য্যন্ত হইয়া থাকে। আমার মাতার সৎসাহস দেখিয়া মোহিত হইয়াছিলাম। তিনি ধার করিয়া বাবুগিরি ও ফ্যাশনের দাস হইলেন না। তৎকালীন নিগ্রোসমাজের পক্ষে এরূপ চরিত্রবত্তা নিতান্তই বিরল। আজ অতীতের ঘটনাবলী স্মরণ করিয়া বুঝিতে পারিতেছি যে আমার সমপাঠীদের ভিতর যাহারা বাবুগিরি ও বিলাসের নূতন নূতন অনুষ্ঠানগুলি ব্যবহার করিত তাহারা পরে অনাহারে দুঃখে দারিদ্র্যে জীবন কাটাইয়াছে।

 পাঠশালায় ভর্ত্তি হইবার সময়ে আমাকে আর একটা বিপদ উত্তীর্ণ হইতে হইয়াছিল। এতদিন আমাকে লোকে ‘বুকার’ বলিয়া ডাকিত। তাহাই আমার নাম জানিতাম। স্কুলে যইবা মাত্রই নাম লইয়া মহা গোলযোগে পড়িলাম। প্রত্যেক ছাত্রেরই দুইটা শব্দে নাম ডাকা হইতেছে। কাহারও বা তিন শব্দে নাম সম্পূর্ণ। আমার মাথা ঘুরিতে লাগিল। শিক্ষক মহাশয় যখন আমার নাম খাতায় তুলিবেন তখন কি বলিব? ভাবিতে ভাবিতে