পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চেলারা? গুরুর সাধনপদ্ধতি কি সজ্ঞানে না হোক অজ্ঞানে তাদের কোন অনিষ্ট করবে না।

 আমি এ কথা সম্পূর্ণ মানি যে, প্রত্যেকেরই নিজের ক্ষমতায় পূর্ণ বিকাশ করবার চেষ্টা করতে হবে। নিজের মধ্যে যা সর্ব্বোৎকৃষ্ট, তার দানই হচ্ছে প্রকৃত সেবা। আমাদের অন্তর প্রকৃতি, আমাদের স্বধর্ম্ম যখন সার্থকতা লাভ করে, তখনই আমরা যথার্থ সেবার অধিকারী হই। এমার্সনের কথায় বলতে গেলে, নিজের ভিতর থেকেই আমাদের গ’ড়ে উঠতে হবে; তাতে আমরা সকলেই যে এক পথের পথিক হব এমন কোন কথা নেই, যদিও একই আদর্শ হয়ত আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। শিল্পীর সাধনা কর্ম্মযোগীর সাধনা থেকে ভিন্ন, তপস্বীর যে সাধনা বিদ্যার্থীর সে সাধনা নয়, কিন্তু আমার মনে হয় এ সকলের আদর্শ প্রায় একই। গোলাকার ব্যক্তিকে চতুষ্কোণ গর্ত্তের মধ্যে পুরতে আর যেই চা’ক না কেন, আমি কখনই চাইনে। নিজের প্রতি সত্য হ’লে বিশ্বমানবের প্রতি কেউ অসত্য হতে পারে না। তাই আত্মোন্নতি ও আত্মবিকাশের পথ নিজের প্রকৃতিই দেখিয়ে দেবে। প্রত্যেক ব্যক্তি যদি নিজের শক্তি ও প্রকৃতি অনুসারে নিজেকে সার্থক ক’রে তুলতে পারে, তাহলে অচিরেই সমগ্র জাতির নব-জীবন দেখা দেয়। সাধনার অবস্থায় হয়ত মানুষকে এমন ভাবে জীবন যাপন করতে হয়, যাতে তাকে বাইরে থেকে স্বার্থপর বা আত্মসর্ব্বস্ব মনে হতে পারে। কিন্তু সে অবস্থাতে মানুষ বিবেকবুদ্ধির দ্বারা চালিত হবে, বাইরের লোকের মতামতের দ্বারা নয়। সাধনার ফল যখন প্রকাশিত হবে, তখনই লোকে স্থায়ী বিচার করবে, সুতরাং আত্মবিকাশের সত্য পথ যদি অবলম্বন করা হয়ে থাকে, তা হ’লে লোকমত উপেক্ষা করা যেতে পারে। অতএব দেখা যাচ্ছে যে তোমার সঙ্গে আমার মতের যে বিশেষ পার্থক্য আছে, তা নয়। ইতি—

তোমার স্নেহবদ্ধ—সুভাষ

১৮৬