পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দুঃখিত। আমারও যে মনে কষ্ট হয় না—তা বলতে পারি না। কিন্তু আমি প্রায়ই ভেবে দেখি যে এর মধ্যে নিশ্চয়ই ভগবানের একটা বড় উদ্দেশ্য আছে। তা যদি না হয় তবে এত রাজবন্দীদের মধ্যে আমি বা আমরা কয়জন কেন এখানে এলুম? তা’ছাড়া, আমি মধ্যে মধ্যে এত আনন্দ অনুভব করি যে তা বলতে পারি না। আনন্দ যদি না পেতুম, তবে এতদিনে বোধ হয় পাগল হয়ে যেতুম। আমরা ধর্ম্ম পুস্তকে প্রায়ই পড়ে থাকি যে দুঃখের মধ্যে সুখ আছে। এ কথাটা একশবার সত্যি। কর্ম্মের মধ্যে যদি মানুষ কোন প্রকার সুখ না পেতো, তা হ’লে মানুষ কখনও অম্লান মনে কষ্ট সইতে পারত না। অবশ্য যে কষ্টটা মানুষ পরের জন্য ভোগ করে তার মধ্যে যতটা সুখ পায় বোধ হয় অন্য কোন কষ্টের মধ্যে ততটা সুখ পায় না। মা ছেলের জন্য, ভাই ভাইয়ের জন্য, বন্ধু বন্ধুর জন্য অথবা স্বদেশসেবী দেশের জন্য, যে দুঃখ ভোগ করে, তার মধ্যে যদি আনন্দ না পেতো, তবে কি সে কষ্ট সহ্য করতে পারতো? ভক্ত যে বিরহের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণকে পেয়ে থাকে একথা খুব ঠিক। কারণ এক বৎসর কাল দেশান্তরিত হয়ে আমি অনুভব করছি আজ আমার জন্মভূমি আমার নিকট কত প্রিয়, কত মধুর, কত সুন্দর হয়ে উঠেছে। আজ মনে হচ্ছে জন্মভূমিকে এমন যত ভালবাসি, জীবনে এত ভালবাসি নাই। আর সেই স্বর্গাদপি গরীয়সী জন্মভূমির জন্য যদি কষ্ট সইতে হয়—সে কি আনন্দের বিষয় নয়? আজ আমি বাইরে দেশছাড়া—কিন্তু অন্তরের মধ্যে, কল্পনার মধ্যে দেশকে পেয়ে থাকি। আর সে পাওয়ার মধ্যে কি কম আনন্দ?···[ইহার পর পাঁচটি পঙতি সেন্সর কর্তৃপক্ষ বাদ দিয়াছিল]

২০৮