পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 প্রাতে অথবা অপরাহ্ণে খণ্ড খণ্ড শুভ্র মেঘ যখন চোখের সামনে ভাসতে ভাসতে চলে যায়, তখন ক্ষণেকের জন্য মনে হয় মেঘদূতের বিরহী যক্ষের মত তাদের মারফৎ অন্তরের কথা কয়েকটা বঙ্গ-জননীর চরণ প্রান্তে পাঠিয়ে দিই। অন্ততঃ ব’লে পাঠাই, বৈষ্ণবের ভাষায়—

“তোমারই লাগিয়া কলঙ্কের বোঝা,
বহিতে আমার সুখ।”

 সন্ধ্যার নিবিড় ছায়ার আক্রমণে দিবাকর যখন মান্দালয় দুর্গের উচ্চ প্রাচীরের অন্তরালে অদৃশ্য হয়, অস্তগমনোন্মুখ দিনমণির কিরণজালে যখন পশ্চিমাংশ সুরঞ্জিত হয়ে উঠে এবং সেই রক্তিম বাগে অসংখ্য মেঘখণ্ড রূপান্তর লাভ ক’রে দিবালোক সৃষ্টি করে— তখন মনে পড়ে সেই বাঙ্গলার আকাশ, বাঙ্গলার সূর্য্যাস্তের দৃশ্য। এই কাল্পনিক দৃশ্যের মধ্যে যে এত সৌন্দর্য্য রয়েছে তা কে পূর্ব্বে জানত!

 প্রভাতের বিচিত্র বর্ণচ্ছটা যখন দিঙমণ্ডল আলোকিত ক’রে এসে নিদ্রালস নয়নের পর্দ্দায় আঘাত ক’রে বলে, “অন্ধ জাগো”—তখনও মনে পড়ে আর একটি সূর্য্যোদয়ের কথা, যে সূর্য্যোদয়ের মধ্যে বাঙ্গলার কবি, বাঙ্গলার সাধক বঙ্গ-জননীর দর্শন পেয়েছিল।

 থাক্— আমি বোধ হয় Pedantic হয়ে পড়েছি। তবে এটা Pedantry নয়—বাচালতা। ভাবের আদান-প্রদান বহুদিন বন্ধ থাকলে যা হয়—তারই একটা দৃষ্টান্ত। Engine যেমন মধ্যে মধ্যে তার খানিকটা Steam ছেড়ে দিয়ে আত্মরক্ষা করে—আমার অবস্থাও তদ্রূপ।

 সেবক সমিতির কাজ ভাল চলছে শুনে সুখী হলুম। Lansdowne branch-এর সহিত কোনরূপ মনোমালিন্য ঘটা উচিত নয়! আশা করি, তাঁরা কাজকর্ম্ম ভাল করছেন। দক্ষিণ কলিকাতা সেবাশ্রমের orphange-এর জন্য যদি কিছু করতে পারেন তবে বড় ভাল হয়। এটার তেমন উন্নতি হচ্ছে না বোধ হয়— অথচ কাজটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

২৬১