পাতা:প্রকৃতি বনাম মানুষঃ একটি পরিকল্পিত সংঘাত - মাধব গাডগিল.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সসদ্য এবং ওয়র্ল্ড ওয়ইল্ডলাইফ (ইণ্ডিয়া) ফাউণ্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অ্যান রাইট। অ্যান ছিলেন সেই রাইট পরিবারের সদস্য, যারা কলকাতায় পদার্পণ করেছিল ব্রিটিশদের সিভিল সার্ভিস এবং ভারতীয় পুলিশ বিভাগে কাজ করার জন্য। মনে রাখতে হবে, এই পরিবারের সদস্যদের সকলেই ব্রিটেনের নাগরিকত্ব বজায় রেখেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকেও তারা লোভাতুর শিকারি ছিলেন, তারপর থেকে তারা এদেশের সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণের থেকে কীভাবে অন্যান্য সুযোগসুবিধা নেওয়া যায়, তা ভাবতে শুরু করেন। এই রাইট পরিবার দু’টি খুব মুনাফাদায়ী রিসর্ট-এর পরিচালক যার একটি কানহায় এবং অন্যটি সুন্দরবনের সংরক্ষিত অরণ্যে। রাইটরা কানহা অরণ্যের লাগোয়া রিসর্টটার নাম রেখেছেন কিপ্লিং ক্যাম্প। সেই অনবদ্য লেখক রাডিয়ার্ড কিপ্লিং যিনি একইসঙ্গে যেমন ভীষণ বর্ণবাদী ছিলেন, তেমনই আবার জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করেছিলেন। ব্যাঘ্র সংরক্ষিত অরণ্য ছিল একেবারেই ওয়র্ল্ড ওয়ইল্ডলাইফ ফাউণ্ডেশনের মস্তিষ্কপ্রসূত। প্রিন্স ফিলিপ, রানী এলিজাবেথের স্বামী ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। তাই, রাইট পরিবারের অনেকেই অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়র-এর মতো সম্মান পেলে আশ্চর্য হবার কিছু নেই।

 শিকারে ব্রিটিশদের অধিকার অক্ষুণ্ণ

 আত্মবিস্মৃত ভারতীয়রা যখন তাদের ঔপনিবেশিক প্রভুদের সুতোর টানে নেচে নিজেদের দেশে শিকার নিষিদ্ধ করছিল, সেইসময় থেকে আজ অবধি ব্রিটেনে বহু বহু শুটিং এস্টেট রমরমিয়ে চলেছে এবং তাদের বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে পাখি শেষ হয়ে চলেছে। ব্যক্তিগত জমিমালিকরা পশুপালক বা শিকারভূমির রক্ষক নিযুক্ত করতেন পোচিং আটকানোর জন্য এবং common pheasants, French partridge ইত্যাদি সব পাখি প্রতিপালনের জন্য, wild red grouse-দের সামলানোর জন্য এবং র্যাপ্টারদের মতো শিকারিদের প্রতিরোধ করার জন্য। এই শিকারি পাখিদের নিয়ন্ত্রণের ফলে গত ২০০ বছর ধ’রে বেশ কিছু শিকারি পাখির প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যেমন— White-tailed eagle, Red kite, Western marsh harrier, Osprey and Northern goshawk-এর মতো প্রজাতিগুলি। প্রতিদিন ইংল্যাণ্ডে ১২,৩০০ বন্য স্তন্যপায়ী এবং পাখি মারা পড়ে সেদেশের শুটিং এস্টেটগুলিতে, যেখানে ধ্বংসলীলার মূল কাণ্ডারিদের অন্যতম হল পশুরক্ষকরা।

 সারিস্কা

 ভারতের শহুরে শিক্ষিতরা পশ্চিমে তৈরি হওয়া এইসব খামখেয়ালিপনায় যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছিলেন। বাঘ সবসময়ই পশ্চিমীদের অভিভূত করেছে; ১৭৯৪-এ উইলিয়াম ব্লেকের কবিতার পংক্তি “Tyger Tyger, burning bright,/ In the forests of the night;/ What immortal hand or eye,/ Could frame thy fearful symmetry?” থেকেই তা স্পষ্ট। পশ্চিমে, বাঘকেন্দ্রিক প্রকৃতি-পর্যটন এখন বেশ কেতাদুরস্ত বিষয়। ভারতের ধনী শহুরেরাও আজকাল এটির সুযোগ নিচ্ছেন, উপভোগ করছেন। সারিস্কা টাইগার রিজার্ভ, যা নাকি আগে আলওয়ারের মহারাজাদের মৃগয়াক্ষেত্র ছিল, এখন পশ্চিমী এবং ভারতীয়দের খুব প্রিয় একটা পর্যটনকেন্দ্র। আমি ২০০৫ সালে সেখানে গিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীর তৈরি টাইগার টাস্ক ফোর্সের একজন সদস্য হিসেবে। এই টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছিল কারণ কয়েক বছর যাবৎ সেখানে

18