পাতা:প্রকৃতি বনাম মানুষঃ একটি পরিকল্পিত সংঘাত - মাধব গাডগিল.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাঘের দেখা পাওয়া যায়নি, এমনকি পায়ের ছাপ বা কণ্ঠস্বর-এর মতো বাঘের উপস্থিতির কোনো পরোক্ষ প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছিল না। রাজস্থান বনদপ্তর বুঝিয়েছিল যে “এখন বাঘেরা সাময়িকভাবে সংরক্ষিত এলাকার বাইরে পরিযানে গেছে, কিন্তু বর্ষার পরেই তারা ফিরে আসবে।” প্রজেক্ট টাইগার কর্তৃপক্ষও এই ধারণাকে সমর্থন করেছিল। টাস্ক ফোর্স সারিস্কাতে যখন মিটিঙে বসেছে, বাকি সদস্যরা বনদপ্তরের আতিথেয়তায় লজে পানভোজনেই ব্যস্ত ছিলেন। শুধু আমি এবং সুনীতা নারেন, টাস্ক ফোর্সের সভাপতি বনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলি। কারণ তাঁরাই ঠিক মতো বলতে পারতেন যে বাস্তবে ঠিক কী ঘটে চলেছে। বনকর্মীরা তাদের ফিল্ড ডাইরি বের করেন এবং এতগুলো বছরে সেখানকার এণ্ট্রিগুলো আমাদের দেখান। তারা খুব ভালোভাবেই জানতেন যে ১৯৯৯ থেকে বাঘের সংখ্যা ক্রমশ কমেছে এবং ২০০২-তে আর একটি বাঘও অবশিষ্ট ছিল না।

সাল ১৯৯৮ ’৯৯ ২০০০ ’০১ ’০২ ’০৩ ’০৪
সরকারি সমীক্ষা ২৪ ২৬ ২৬ ২৬ ২৭ ২৬ ২৭
স্টাফদের দেখা ১৭

কিন্তু তাদের ওপরওয়ালারা সকলকে ঠকাচ্ছে এবং দাবি করছে যে ২০০২ সাল পর্যন্ত নাকি ২৭-টা বাঘ সারিস্কার চারপাশে ঘুরে বেড়াত। একই সময়ে ভারতের ইণ্টলিজেন্স এজেন্সি, সিবিআই-কে একটা তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সিবিআই দু’মাসের মধ্যে তাদের তদন্তের রিপোর্টে জানায় যে সেখানে আর কোনো বাঘ অবশিষ্ট নেই। বাঘের নিরুদ্দেশের জন্য পোচিংকে দায়ী করা হয়। কিন্তু এই পোচার কারা? রেকর্ড বহির্ভূতভাবে সিবিআই এই টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে কথা বলে। আমাদের জানায় যে বনবিভাগের আধিকারিকরা যে এই পোচিং-এ যুক্ত তা নিয়ে কোনো সংশয়ই থাকতে পারে না। পুতিগন্ধময় বাঘের চামড়াসুদ্ধ মৃতদেহ দিনের পর দিন ফেলে রাখা হত। এই মৃতদেহগুলো অফিসারদের চোখে পড়েনি এমনটা হওয়া কার্যত অসম্ভব। নিঃসন্দেহে তারা পোচিং চক্রের সঙ্গে যুক্ত। যাইহোক, এই পর্যবেক্ষণগুলো আমরা আমাদের টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে রাখতে পারিনি। বাস্তবে কিন্তু পোচিং-এর অভিযোগে আমলারা আশপাশের বহু গ্রাম থেকে বহু গ্রামবাসীকে ধরপাকড় করেছে, পিটিয়েছে। কিন্তু অবশ্যই এর জন্য কোনোদিনই কোনো আমলাকে দায়ী করা হয়নি।

19