পাতা:প্রকৃতি বনাম মানুষঃ একটি পরিকল্পিত সংঘাত - মাধব গাডগিল.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মানুষ আহত হয়। হাতি, বনশুয়োর, নীল গাই, কৃষ্ণসার হরিণ, গাউর বা ভারতীয় বাইসন ইত্যাদি প্রাণীরা হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল, সম্পত্তি নষ্ট করে। সাধারণ মানুষ সরকারি অনুমতি ছাড়া স্বাধীনভাবে আত্মরক্ষা করতে, এমনকি হানাদার পশুদের তাদের ঘরদোর এবং ফসলের ক্ষেত থেকে তাড়াতেও পারে না।১৭ এটা সংঘাতের মাত্রার একটা মোদ্দা এবং তৈরি আন্দাজ, যদিও বন ও বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য অস্পষ্টতায় আবৃত।১৮ বন্যপ্রাণ সংখ্যা সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায় একমাত্র কিছু সংরক্ষিত এলাকায় বিশ্বাসযোগ্যতাহীন ক্ষেত্র সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে। শ্রী এইচ এস পাবলা সহমত হয়েছেন যে বেশ বড় সংখ্যাক বন্যপ্রাণী সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জঙ্গলের বাইরে। উদাহরণস্বরূপ, সংরক্ষিত অঞ্চলের বাইরে মোট সিংহের কত অংশ সিংহ বসবাস করে তার নির্ভরযোগ্য কোনো হিসেবও নেই। মহেশ রঙ্গরাজনের হিসেব মতো গির জাতীয় পার্কের বাইরে ২০% সিংহ রয়েছে, যেখানে পাবলার মতে ৬০%-ই ওই অরণ্যগুলির বাইরে রয়েছে। গবেষণামূলক রচনা পুঙ্খানুপুঙ্খ পাঠ করলে দেখা যাবে ভারতে মানুষ-বন্যপ্রাণ দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রত্যক্ষ কোনো গবেষণা হয়নি, তার বদলে গবেষণাগুলি সংরক্ষিত এলাকার কাছাকাছি অঞ্চলে মানুষের মনোভঙ্গি, ধারণা, ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলেছে।১৯

বস্তুত WLPA-র মতো একটা অস্ত্র ব্যবহার ক’রে একটি অত্যাচারী শাসন রাজত্ব করতে আরম্ভ করল আমাদের সারাদেশে; শুধুমাত্র গ্রাম বা জঙ্গলাকীর্ণ এলাকাতেই নয়, দিল্লির একেবারে হৃদয়ে, চিত্তরঞ্জন পার্কে। সেখানে বাঁদররা মানুষদের আক্রমণ করছে এবং কামড়াচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিরক্তিকর হল বনশুয়োর শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞাটি। International Union for Conservation of Nature (IUCN) বেশীরভাগ বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণী ছাড়াও সারা পৃথিবীর সংরক্ষণের হালহকিকতের নির্ভরশীল, যত্নবান তথ্য রক্ষা করে। ওরা বনশুয়োরকে সবচেয়ে কম চিন্তার বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাস্তবত, ইউরোপ ও কানাডার বনাঞ্চলের মতো ও পৃথিবীর অন্যান্য অংশের মতোই ভারতেও এদের সংখ্যা বাড়ছে। ভারতের ক্ষেত্রে কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকলেও, সারা ভারতের চাষিরাই জানাচ্ছে যে এদের সংখ্যা বাড়ছে। এটি শুধুমাত্র জঙ্গল লাগোয়া অঞ্চলে নয়, বরং মানুষের ক্ষেত্রে জঙ্গল থেকে অনেক দূরের জায়গাও ভয়াবহ বিপদের চেহারা নিয়েছে। যেমন, মহারাষ্ট্রের এমন এক তালুকে যেখানে বৃষ্টিপাত সবচেয়ে কম হয়। যেহেতু এখন আইন রয়েছে, তাই কোনো বনশুয়োর একজন চাষির ফসল নষ্ট করলে, সেই চাষি বনশুয়োর মারতে পারে বন আমলাতন্ত্রের লাল সুতোর ফাঁসে অনেকটা জড়িয়েজাপ্টে থাকার পর। বনশুয়োরের মৃতদেহটি আধিকারিকদের হাতে হস্তান্তর করতে হবে, যারা ময়নাতদন্ত করবে। তারপর তাকে পোড়ানো হবে বা অন্য কোনোভাবে ধ্বংস করা হবে। ইসলামের মতো কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বনশুয়োরের মাংস সারা পৃথিবীতে সমাদৃত এবং প্রোটিনের মূল্যবান উৎস হিসেবে পরিবেশিত হয়; যেভাবে ওবেলিক্স নামে বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রটিও এই খাদ্য উদযাপন করেছে। জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্য দেখাচ্ছে যে সারা ভারতে উচ্চমাত্রার অপুষ্টি রয়েছে। মানুষকে এই প্রয়োজনীয় প্রোটিনটুকু থেকেও বঞ্চিত করা অন্যায়, অবিচার। এক্ষেত্রে অন্যায় আরো বেশি কারণ, এর ফলে ফসল পাহারা দেওয়াও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে, যার ফলে কৃষিজ উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে চাষিরা কম পছন্দের ফসল চাষের দিকে সরে যাচ্ছেন অথবা কৃষিই পরিত্যাগ করছেন। দুঃখজনকভাবে এইসব অবিচার সামাজিকভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, নির্লজ্জভাবে আইন লঙ্ঘনের মধ্যে দিয়ে। ঘোড়ার পিঠে বনশুয়োর বাঁধা ভারতের রাজারাজড়াদের এবং জায়গীরদারদের একটা পুরনো খেলা ছিল; কোলাপুরের মারাঠারাজ ছত্রপতী শিবাজির বংশধর ছত্রপতি শাহ মহারাজ-ও

24