পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
৭৫

করি, আপনারা কেবল তর্ক করে আমার অযোগ্যতা প্রমাণ কর্‌তে চেষ্টা করেন কেন? আপনারা আমাকে কি জানেন?

 শ্রীশ স্তব্ধ। পূর্ণ ঘর্ম্মাক্ত।

 নির্ম্মলা। আমি আপনাদের কুমারসভা বা অন্য কোন সভা জানিনে। কিন্তু যাঁর শিক্ষায় আমি মানুষ হয়েছি তিনি যখন কুমারসভাকে অবলম্বন করেই তাঁর জীবনের সমস্ত উদ্দেশ্য সাধনে প্রবৃত্ত হয়েছেন, তখন এই কুমারসভা থেকে আপনারা আমাকে দুরে রাখ্‌তে পারবেন না! (চন্দ্রবাবুর দিকে ফিরিয়া) তুমি যদি বল আমি তোমার কাজের যোগ্য নই, তাহলে আমি বিদায় হব, কিন্তু এঁরা আমাকে কি জানেন? এঁরা কেন আমাকে তোমার অনুষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন করবার জন্যে সকলে মিলে তর্ক কর্‌চেন?

 শ্রীশ তখন বিনীত মৃদুস্বরে কহিল—মাপ কর্‌বেন, আমি আপনার সম্বন্ধে কোন তর্ক করিনি, আমি সাধারণতঃ স্ত্রীজাতি সম্বন্ধেই বলছিলুম―

 নির্ম্মলা। আমি স্ত্রীজাতি পুরুষ জাতির প্রভেদ নিয়ে কোন বিচার কর্‌তে চাইনে—আমি নিজের অন্তঃকরণ জানি এবং যাঁর উন্নত দৃষ্টান্তকে আশ্রয় করে রয়েছি তাঁর অন্তঃকরণ জানি, কাজে প্রবৃত্ত হতে এর বেশী আমার আর কিছু জান্‌বার দরকার নেই।

 চন্দ্রবাবু নিজের দক্ষিণ করতল চোখের অত্যন্ত কাছে লইয়া নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে লাগিলেন। পূর্ণ খুব চমৎকার করিয়া একটা কিছু বলিবার ইচ্ছা করিল, কিন্তু তাহার মুখ দিয়া কোন কথাই বাহির হইল না। নির্ম্মলা দ্বারের অন্তরালে থাকিলে পূর্ণর বাক্‌শক্তি যেরূপ সতেজ থাকে আজ তাহার তেমন পরিচয় পাওয়া গেল না।

 তবু সে মনে মনে অনেক আপত্তি করিয়া বলিল, দেবী, এই পঙ্কিল পৃথিবীর কাজে কেন আপনার পবিত্র দুইখানি হস্ত প্রয়োগ করতে চাচ্চেন?

 কথাটা মনে যেমন লাগিতেছিল মুখে তেমন শোনাইল না—পূর্ণ