পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

 বিরহ সম্ভাবনার উল্লেখমাত্রে দুই ভগিনী পরস্পরকে জড়াইয়া ধরিল এবং নৃপ কোনমতে চোখের জল সাম্‌লাইতে পারিল না।

 নৃপ। আচ্ছা নীরু মেজদিদিকে কেমন করে ছেড়ে যাবি বল্ দেখি? আমরা দুজনে গেলে ওঁর আর কে থাক্‌বে?

 নীরু। সে কথা অনেক ভেবেছি। থাক্‌তে যদি দেন তাহলে কি ছেড়ে যাই? ভাই ওঁরত স্বামী নেই, আমাদেরও না হয় স্বামী না রইল। মেজদিদির চেয়ে বেশী সুখে আমাদের দরকার কি?

 পুরুষবেশধারিণী শৈলবালার প্রবেশ। নীরু টেবিলের উপরিস্থিত থালা হইতে একটি ফুলের মালা তুলিয়া লইয়া শৈলবালার গলায় পরাইয়া কহিল—আমরা দুই স্বয়ম্বরা তোমাকে আমাদের পতিরূপে বরণ করলুম। ―এই বলিয়া শৈলবালাকে প্রণাম করিল।

 শৈল। ও আবার কি?

 নীরু। ভয় নেই ভাই, আমরা দুই সতীনে তোমাকে নিয়ে ঝগড়া করব না। যদি করি, সেজদিদি আমার সঙ্গে পারবে না—আমি একলাই মিটিয়ে নিতে পারব, তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না। না, সত্যি বল্‌চি মেজদিদি, তোমার কাছে আমরা যেমন আদরে আছি এমন আদর কি আর কোথাও পাব? কেন তবে আমাদের পরের গলায় দিতে চাস্‌?

 পুনর্ব্বার নৃপর দুই চক্ষু বাহিয়া ঝর্ ঝর্ করিয়া জল পড়িতে লাগিল। “ও কি ও নৃপ, ছি” বলিয়া শৈল তাহার চোখ মুছিয়া দিল—কহিল―তোদের কিসে সুখ তা কি তোরা জানিস্? আমাকে নিয়ে যদি তোদের জীবন সার্থক হত তা হলে কি আমি আর কারো হাতে তোদের দিতে পারতুম?

 তিনজনে মিলিয়া একটা অশ্রুবর্ষণকাণ্ড ঘটিবার উপক্রম করিতেছিল এমন সময়ে রসিকদাদা প্রবেশ করিয়া কাতরস্বরে কহিলেন—ভাই আমার