পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০০
প্রাকৃতিকী

 আমরা যখন তুষারসমুদ্র দিয়া চলিতে লাগিলাম, জাহাজের চালক প্রায়ই অবকাশ-কালে আমাদের নিকট আসিয়া বসিতেন, কিন্তু পরস্পর আমরা ভিন্নভাষাজ্ঞ হওয়ায় ব্যাক্যালাপে সুযোগ হইত না। নিশ্চেষ্ট হইয়া বসিয়া নানা দুশ্চিন্তার প্রশ্রয় দেওয়া আপেক্ষা ইহাদের ভাষা শিক্ষা করিবার বড় ইচ্ছা হইল; চালকও আমাদের বিশেষ বিবরণ জানিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। উভয়ের সমধেত যত্নে আমরা শীঘ্রই শুক্রবাসিগণের ভাষা আয়ত্ত করিলাম।

 ভাষাজ্ঞান-বৃদ্ধির সহিত শুক্রবাসিগণের সভ্যতা ও বৈজ্ঞানিক উন্নতির অনেক পরিচয় পাইতে লাগিলাম এবং বিজ্ঞানের অনেক অংশে ইহারা আধুনিক পাশ্চাত্য বিজ্ঞান অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর বলিয়া বোধ হইল। শুক্রবাসিগণ জ্যোতির্ব্বিদ্যায় মনুষ্য অপেক্ষা অনেক হীন দেখা গেল। শুক্রের এই অংশে সর্ব্বদাই স্থিরপ্রায় সূর্য্য বিকশিত থাকে বলিয়া, আলোকাধিক্য প্রযুক্ত গ্রহনক্ষত্রাদি পরিদর্শনের কোনই সুবিধা হয় না; বোধ হয় ইহাই তাহাদের এই হীনতার প্রধান কারণ। এতদ্ব্যতীত গগনমণ্ডল অধিকাংশ সময়ই যেরূপ ঘোর কৃষ্ণামেঘাচ্ছন্ন থাকে, তাহা দেখিয়া নিকৃষ্ট জোতিষিক জ্ঞানের জন্য, ইহাদের বুদ্ধিবৃত্তির উপর কোন দোষারোপ করা গেল না। জ্যোতিষ্ক-পরিদর্শনের এ প্রকার প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দেখিলাম ইহাদের দূরবীক্ষণ যন্ত্র আছে এবং তৎসাহায্যে তাহারা শুক্রকক্ষাভ্যন্তরস্থ বরুণগ্রহের (Mercury) গতি ও ইহার উপগ্রহণাদি (Transit) সম্বন্ধে নানা তত্ত্বও আবিষ্কার করিয়াছে। শুক্রগ্রহ সূর্য্যের নিকটবর্ত্তী হওয়ায় দেখিলাম পার্থিব বৈজ্ঞানিকগণ অপেক্ষা ইহারা সৌর-ব্যাপারের অনেক গূঢ় রহস্য সমাধান করিয়াছে, কিন্তু পৃথিবীর ন্যায় শুক্রের উপগ্রহ না থাকায়, ইহারা সূর্য্যগ্রহণ দেখিতে পায় না, কাজেই পূর্ণগ্রহণজাত সূর্য্যের ছটামুকুটই (Corona) বা কি পদার্থ সে বিষয়ে তাহারা সম্পূর্ণ অজ্ঞ।