পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 স্মৃতি হইতে অনেক বড় বড় ঘটনা সরিয়া গিয়াছে, কিন্তু বক্সা ক্যাম্পের একটি ভোরের স্মৃতি এখনও মন ধরিয়া রাখিয়াছে দেখিতে পাই।

 দুর্গের ঘণ্টায় সাতটা বাজিলে তবে আমার ঘুম ভাঙ্গে, ইহার আগে জাগিবার কোন প্রয়োজনই বোধ করি না। ভোরের বাজার নাই, স্কুলকলেজের পড়া নাই, অফিসের চাকুরী নাই, কারও খাইও না পরিও না, অর্থাৎ সপ্তাহে সাতটাই রবিবার। পুণ্যের জোর ছিল, তাই “ডেটিনিউ” হইয়াছি, এক কথায়—চুটাইয়া পেনসন ভোগ করিতেছি।

 সেদিন যথাসময়ে ভোর হইয়াছে, তেমনি আমার যথাসময়ে ঘুমও ভাঙ্গিয়াছে এবং জাগিয়া যথানিয়মে আবার ঘুমাইতেছিলাম। মানে, পাশ ফিরিয়া পাশ বালিশটা টানিয়া লইয়া চোখ বুজিয়া আরাম করিতেছিলাম।

 চোখ বুজিয়া দৃশ্য বন্ধ করা চলে এবং ইচ্ছা হইলে চোখ বন্ধ করাও চলে, কিন্তু কর্ণেন্দ্রিয়ের উপর মানুষের তেমন কোন অধিকার নাই। ইচ্ছা হইলেই কর্ণ বন্ধ করা তো পরের কথা, ইচ্ছা হইলে যে পশুদের মত কানটা নাড়িব, মানুষ হইয়াও আমাদের সে সুবিধাটুকু নাই। মানুষ হওয়া মানেই যে বেশী সুবিধা পাওয়া, ইহা যেন কেহ মনে না করেন।

 কাজেই, বিছানায় শুইয়াই বারান্দায় গলার আওয়াজ শুনি। ব্রাহ্ম মুহূর্তে-জাগারদল ভোরের বাতাস হইতে অগস্ত্যটানে স্বাস্থ্য শুষিয়া লইবার জন্য বাহির হইয়াছেন বুঝিলাম। ব্রাহ্মমুহূর্তের ব্রহ্মচারী দলের আওয়াজ কানে আসে, একবার ভাবি উঠিয়া পড়ি, খানিকটা পাহাড়ী বাতাস গিলিয়া আসি, কিন্তু আত্মাকে কষ্ট দিতে ইচ্ছা হইল না, অর্থাৎ আরামের শয্যা কিছুতেই রেহাই দিতে চাহিল না।

 এমন সময়ে কানে আসে বারবেলের শব্দ, ডাম্বেলের ঠুংঠাং, মুগুরের সোঁ-সোঁ, বৈঠকের দুপ্‌দাপ। বুঝিতে বিলম্ব হইল না যে, কম্বলের ঘরে বিজয় দত্তের দল ঢুকিয়াছে।

১৯১