পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুণ্ডল৷ লুৎফউন্নিসা কহিলেন, “আপনার কি পরামর্শ ?" র্য। আজিম কহিলেন, "উড়িষ্যা ভিন্ন অন্ত আশ্রয় নাই । কেবল সেই স্থানে মোগলের শাসন তত প্রখর নহে, উড়িষ্যার সৈন্য আমাদিগের হস্তগত থাকা আবষ্ঠক । তোমার ভ্রাতা উড়িষ্যার মন্সবদার আছেন । আমি কল্য প্রচার করিব, তিনি যুদ্ধে আহত হইয়াছন । তুমি তাহাকে দেখিবার ছলে কল্যই উড়িষ্যায় Iাত্র কর । তথায় যৎকৰ্ত্তব্য, তাহা সাধন করিয়া শীঘ্র প্রত্যাগমন কর ” লুৎফউন্নিসা এ পরামর্শে সম্মত হইলেন । তিনি উড়িষ্যায় আসিয়া যখন প্রত্যাগমন করিতেছিলেন, তখন র্তাহার সহিত পাঠক মহাশয়ের সাক্ষৎ হইয়াছে । দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পথাস্তরে “ষে মাটীতে পড়ে লোকে উঠে তাই ধ'রে । বীরেক নিরাশ হয়ে কে কোথায় মবে ॥ তুফানে পতিত কিন্তু ছাড়িব না তাল । আজিকে বিফল হলে, হ'তে পারে কাল ॥" - --নবীন তপস্বিনী । ষে দিন নবকুমারকে বিদায় করিয়৷ মতিবিবি ব। তিফউন্নিসা বদ্ধমানাভিমুখে যাত্র করিলেন, সে দিন তনি বৰ্দ্ধমান পর্যন্ত যাইতে পারিলেন না । অঙ্গ টীতে রছিলেন । সন্ধ্যার সময়ে পেষ মনের সহিত একত্র বসিয়া কথোপকথন হুইতেছিল, এমতকালে মতি হিসা পেয মনকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “পেষ মন্‌ ! মামার স্বামীকে কেমন দেখিলে ?” পেষ মন কিছু বিস্মিত হইয়া কহিল, “কেমন আর দথিব ?” মতি কহিলেন, “সুন্দর পুরুষ বটে কি না ?” নবকুমারের প্রতি পেষ মনের বিশেষ বিরাগ স্বন্মিয়াছিল । যে অলঙ্কারগুলি মতি কপালকুণ্ডলাকে দয়াছিলেন, তৎপ্রতি পেয মনের বিশেষ লোভ ছিল ; নে মনে ভরসা ছিল, একদিন চাহিয়া লইবে । সই আশা নিৰ্ম্মল হইয়াছিল ; সুতরাং কপালকুণ্ডল এবং তাহার স্বামী উভয়ের প্রতি তাহার দারুণ বরক্তি। অতএব স্বামিনীর প্রশ্নে উত্তর করিল, দরিদ্র ব্রাহ্মণ আবার সুন্দর কুৎসিত কি ?” সহচরীর মনের ভাব বুঝিয়া মতি হাস্ত করিয়া কহিলেন, “দরিদ্র ব্রাহ্মণ যদি ওমরাহ হয়, তবে সুন্দর পুরুষ হইবে কি না ?” షిరీ পে । সে আবাব কি ? মতি । কেন, তুমি জান না যে, বেগম স্বীকার করিয়াচ্ছেন দে, খক্ষ বাদশাহ হইলে আমার স্বামী, ওমরাহ হইবে ? - な পে । ক্ষ। ত জানি, কিন্তু তোমার পূৰ্ব্বস্বামী ওমরাহ হইবেন কেন ? মতি । তবে আমার কোন স্বামী আছে ? পে ধিনি নুতন হইবেন । মতি ইষত্ হাসিয়| কহিলেন, “আমার ন্যায় সতীর দুই স্বামী, বড় অঙ্গায় কথা—ও কে যাইতেছে ?” যাহাকে দেখিয়া মতি কহিলেন, “ও কে যাইভেছে ?” পেষ মন তাহাকে চিনিল, সে আগ্রানিবাসী গ৷ আজিমের আশ্রিত ব্যক্তি । উভয়ে ব্যস্ত হইলেন । পেয মন তাহাকে ডাকিল । সে ব্যক্তি আসিয়া লুৎফ উন্নিসাকে অভিবাদন পূৰ্ব্বক একখানি পত্র দম্ন করিল ; কহিল, “পত্র লইয়া উড়িষ্যায় যাইতেছিলাম । পত্র জরুরী ।” পত্র পড়িয়া মতিবিবির আশা-ভরসা সকল অস্তহিত হইল। পত্রের মৰ্ম্ম এই-- -r “আমাদিগের যত্ন বিফল হইয়াছে । মৃত্যুকালেও আকৃবর শাহ আপন বুদ্ধিবলে আমাদিগকে পরাভূত্ব করিয়াছেন । তাহার পরলোকে গতি হইয়াছে । তাহার আজ্ঞiবলে কুমার সেলিম এক্ষণে জাৰ্হাগীর শাহ হইয়াছেন । তুমি খক্ষর জন্ত ব্যস্ত হইবে না । এই উপলক্ষে কেহ তোমার শক্রতা সাপিতে ন পারে, এমত চেষ্টার জষ্ঠ তুমি শীঘ্র অগ্রাম ফিরিয়া আসিবে ।” অকৃবর শাহ যে প্রকারে এ ষড়যন্ত্র নিষ্ফল করেন, তাহা ইতিহাসে বর্ণিত আছে ; এ স্থলে সে বিবরণের আবশ্ব)ক তা নাই । ● পুরস্কারপূর্বক দুস্তকে বিদায় করিয়৷ মতি পেষ মনুকে পত্র শুনাইলেন । পেষ মন কহিল, “এক্ষণে উপায় ?” মতি। এখন আর উপায় নাই । পে । ( ক্ষণেক চিন্ত| করিয়া ) ভাল, ক্ষতিই কি ? যেমন ছিলে তেমনই থাকিবে, বাদশাহের মোগলপুরস্ত্রীমাত্রেই অন্ত রাজ্যের পাটরাণী অপেক্ষাও বড় । মতি । ( ঈষৎ হাসিয়া ) তাহা অার হয় না । আর সে রাজপুরে থাকিতে পারিব না । শীঘ্রই মেহেরউন্নিসার সহিত জাহাগীবের বিবাহ হইবে । মেহেরউন্নিসাকে আমি কিশোরবন্থোবধি ভাল জানি ; একবার সে পুরবাসিনী হইলে সেই বাদশাহ হইবে ; জার্তাগীর বাদশাহ নামমাত্র থাকিবে । আমি যে তাহার" সিংহাসনারোহণের পথরোধের চেষ্টা পাইয়াছিলাম,