পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

:* • 3 এই বলিয়। গোবিন্দলাল রোহিণীকে ডাকিয়| - বাগানের বৈঠকখানায় লইয়া গেলেন। সেখানে উভয়ের যে কথোপকথন হইল, তাহার পরিচয় দিতে আমাদিগের প্রবৃত্তি হয় না । কেবল এইমাত্র বলিব যে, সে রাত্রে রোহিণী গৃহে যাইবার পূৰ্ব্বে বুঝিয়া গেলেন যে, গোবিন্দলাল রোহিণীর রূপে মুগ্ধ । ষড় বিংশতিতম পরিচ্ছেদ রূপে মুগ্ধ? কে কার নয় ? আমি এই হরিত নীল চিত্রিত প্রজাপতিটির রূপে মুগ্ধ । তুমি কুম মিত কামিলী-শাখার রূপে মুগ্ধ ৷ তাতে দোষ কি ? রূপ ত মোহের জন্ত হইয়াছিল। গোবিন্দলাল প্রথমে এরূপ ভাবিলেন। পাপের প্রথম সোপানে পদার্পণ করিয়৷ পুণ্যাত্মাও এইরূপ ভাবে ; কিন্তু যেমন বাহ্যজগতে মাধ্যাকর্ষণ, তেমনই অন্তর্জগতে পাপের আকর্ষণে প্রতি পদে পতনশীলের গতি বৰ্দ্ধিত হয় । গোবিন্দলালের অধঃপতন বড় দ্রুত হুইল—কেন না, রূপতৃষ্ণ অনেক দিন হইতে তাহার হৃদয় শুষ্ক করিয়! তুলিয়াছে। আমরা কেবল কাদিতে পারি, অধঃপতন বর্ণনা করিতে পারি না । ক্রমে কৃষ্ণকাস্তের কানে রোহিণী ও গোবিন্দলালের নাম একত্রিত হইয়। উঠিল । কৃষ্ণকান্ত দুঃখিত হইলেন । গোবিন্দলালের চরিত্রে কিছুমান কলঙ্ক ঘটিলে তাহার বড় কষ্ট । মনে মনে ইচ্ছা হইল, গোবিন্দলালকে কিছু অনুযোগ করিবেন । কিন্তু সম্প্রতি কিছু পীড়িত হইয় পড়িয়ছিলেন, শয়নমন্দির ত্যাগ করিতে পারিতেন না । সেখানে গোবিন্দলাল তাহাকে প্রত্যহ দেখিতে অসিত, কিন্তু সবিদ। তিনি সেবকগণ-পরিবেষ্টিত থাকিতেন, গোবিন্দলালকে সকলের সাক্ষাতে কিছু বলিতে পরিতেন না । কিন্তু পীড়া বড় বৃদ্ধি পাইল। হঠাৎ কৃষ্ণকান্তের মনে হুইল যে, বুঝি চিত্রগুপ্তের হিসাব-নিকাশ হইয়। আসিল ; এ জীবনের সাগরসঙ্গম বুঝি সম্মুখে । তার বিলম্ব করিলে বুঝি বলা হইবে না। একদিন গোবিন্দলাল অনেক রাত্রে বাগান হইতে প্রত্যাগমন করিলেন । সেই দিন কৃষ্ণকান্ত মনের কথা বলিবেন মনে করিলেন । গোবিন্দলাল দেখিতে আসিলেন । কৃষ্ণকান্ত পার্শ্ববর্তিগণকে উঠিয়া যাইভে বলিলেন । পাশ্ব বৰ্ত্তিগণ সকলে উঠিয়া গেল। তখন গোবিন্দলাল কিঞ্চিৎ অপ্রতিভ হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি আজ কেমন আছেন ?” ৰঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী কৃষ্ণকান্ত ক্ষীণস্বরে বলিলেন, “আজি বড় ভাল নাই । তোমার এত রাত্রি হইল কেন ?” গোবিন্দলাল সে কথার কোন উত্তর না দিয়া কৃষ্ণকান্তের প্রকোষ্ঠ হস্তমধ্যে লইয়। নাড়ী টিপিয়া দেখিলেন। অকস্মাৎ গোবিন্দলালের মুখ শুকাইয়া গেল । কৃষ্ণকাস্তের জীবন-প্রবাহ অতি ধীরে ধীরে বহিতেছে । গোবিন্দলাল কেবল বলিলেন, “আমি আসিতেছি ।” কৃষ্ণকাস্তের শয়নগৃহ হুইতে নির্গত হুইয়। গোবিন্দলাল একেবারে স্বয়ং বৈদ্যের গৃহে গিয় উপস্থিত হইলেন । বৈদ্য বিস্মিত হইল। গোবিন্দলাল বলিলেন, “মহাশয়, শীঘ্ৰ ঔষধ লইয়া আসুন, জ্যেষ্ঠতাতের অবস্থা বড় ভাল বোধ হইতেছে ন৷ ” বৈদ্য শশব স্তে একরাশি বটিক লইয়। তাহার - সঙ্গে ছুটলেন– কৃষ্ণকাস্তের গুহে গোবিন্দলাল বৈদ্যসহিত উপস্থিত হইলেন, কৃষ্ণকান্ত কিছু ভীত হইলেন, কবিরাজ হাত দেখিলেন, কৃষ্ণকান্ত জিজ্ঞাসা করিলেন, “তেমন কিছু শঙ্কা হইতেছে কি ?” বৈদ্য বলিলেন, “মনুষ্যশরীরে শঙ্ক কখন নাই ?" কৃষ্ণকান্ত বুঝিলেন । বলিলেন, “ক তক্ষণ মিসাদ ?” বৈদ্য বলিলেন, “ঔষধ খাওয়াইয়। পশ্চাৎ বলিতে পরিব । বৈদ্য ঔষধ মাড়িয়া সেবনজন্য কৃষ্ণকাস্তেব নিকট উপস্থিত করিলেন, কৃষ্ণকান্ত ঔষধের খল হতে লইয়। একবার মাথায় স্পর্শ করাইলেন, তাহার পর ঔষপটুকু সমুদয় পিক্‌দানীতে নিক্ষিপ্ত করিলেন । বৈদ্য বিসঃ হইল । কৃষ্ণকাগু দেখিয়া বলিলেন, “পিষঃ হইবেন না । ঔষধ খাষ্টয় সচিবার বয়স আমার নহে । ঔষদের অপেক্ষ হরিনামে অমাব উপকার । তোমর হরিনাম কর, আমি শুনি ।” কৃষ্ণকান্ত ভিন্ন কেহই হরিনাম করিল না । কিন্তু সকলেই স্তম্ভিত, ভাত, বিস্মিত হইল। কৃষ্ণকান্ত একই ভয়শূণ্ঠ । রুষ্ণকান্ত গোবিন্দলালকে বলিলেন, “আমার শিয়রে দেরাঞ্জের চাবি আছে, বাহির কর।” গোবিন্দলাল বালিসের নীচে হইতে লইলেন । কৃষ্ণকান্ত বলিলেন, “দেরাজ খুলিয়। আমার উইল ষাহির কর " গোবিন্দলাল দেরাজ খুলিয়। করিলেন । কৃষ্ণকান্ত বলিলেন, “আমার আমল, মুহুরি ও দশ জন গ্রামস্থ ভদ্রলোক ডাকাও ৷” তখনই নায়েব, মুহুরি, গোমস্ত, কারকুনে,-চট্টোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায়, বন্দ্যোপাধ্যায়, ভট্টাচার্য্যে,— ঘোষ, বস্থ, মিত্র দত্তে ঘর পূরিয়া গেল । চাবি উইল বাহির