পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ নিৰ্ম্মল মনে ভাষিল, মিথ্যা কথা কেন বলিব, এ ব্যক্তি আমার কি করিবে ? কার ভয়ে রাজপুতের মেয়ে মিথ্যা বলিবে ? অতএব উত্তর করিল, “আমি উদয়পুর হইতে আসিয়াছি।” তখন সে পুরুষ জিজ্ঞাসা আসিয়াছ ?” নিৰ্ম্মল ভাবিল, ইহাকে বা এত পরিচয় কেন দিব ? বলিল, “আপনাকে এত পরিচয় দিয়া কি হুইবে ? এত জিজ্ঞাসাবাদ না করিয়া আপনি যদি আমীকে ফটক পার করিয়া দেন, তাহ হইলে বিশেষ উপকৃত হইব ।” 爱 পুরুষ উত্তর করিল, “তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া উত্তরে যদি সস্তুষ্ট হই, তবে তোমাকে ফটক পার করিয়া দিতে পারি ” নিৰ্ম্মল । আপনি কে, তাহা না জানিলে আমি সকল কথা আপনাকে বলিব না । পুরুষ উত্তর করিল, “আমি আলমগীর বাদশাহ ।” তখন সেই তসবীর, ষাহা চঞ্চলকুমারী পদাঘাতে ভাঙ্গিয়াছিল, নিৰ্ম্মলকুমারীর মনে উদয় হইল। নিৰ্ম্মল একটু জিব কাটিয়া, মনে মনে বলিল, “ছ, সেই ত বটে " তখন নিৰ্ম্মলকুমারী ভূমি স্পর্শ করিয়া বাদশাহকে রীতিমত সেলাম করিল। যুক্তকরে বলিল, “হুকুম ফরমাউন " - বাদশাহ বলিলেন, আসিয়াছিলে ?” নিৰ্ম্মল। হজরং বাদশাহ বেগম উদিপুরী সাহেবার কাছে ! বাদশাহ ] কি বলিলে ? উদয়পুর হইতে দুদি’ “পুরীর কাছে ? কেন ? নি। পত্র ছিল । বাদ । কাহার পত্র ? নি। মহারাণার রাজমহিষীর। বাদ । কৈ সে পত্র ? নি। হজরৎ বেগম সাহেবাকে তাহা দিয়াছি । বাদশাহ বড় বিস্মিত হইলেন । বলিলেন, “আমার সঙ্গে এসে * নিৰ্ম্মলকে সঙ্গে লইয়া বাদশাহ উদিপুরীর মন্দিরে গমন করিলেন । দ্বারে নিৰ্ম্মলকে দাড় করাইয়া, তাতারী প্রহরিণীদিগকে বলিলেন, “ইহাকে ছাড়িও ন৷ ” নিজে উদিপুরীর শষ্যা-গৃহমধ্যে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, উদিপুরী ঘোর নিদ্রাভিভূত তাহার বিছানায় পত্ৰখানা পড়িয়া আছে । ঔরঙ্গজেব তাহ করিল, "কেন

  • এখানে কাহার কাছে

èᏭ লইয়া পাঠ করিলেন। পত্ৰখানি তখনকার রীতিমত ফাসাঁতে লেখা । - পত্র পাঠ করিয়া, নিদাঘসন্ধ্যাকাদম্বিনী তুল্য ভীষণ কান্তি লইয়া ঔরঙ্গজেব বাহিরে আসিলেন । । নিৰ্ম্মলকে বলিলেন, “তুই কি প্রকারে এই মহালমধ্যে । প্রবেশ করিলি ? নিৰ্ম্মল যুক্তকরে বলিল, “বাদীর অপরাধ মার্জন হউক—আমি এ কথার উত্তর দিব না ।” ঔরঙ্গজেব বিস্মিত হইলেন । বলিলেন, “কি, এত হেমাকৎ ? আমি দুনিয়ার বাদশাহ-- আমি জিজ্ঞাসা করিতেছি, তুই উত্তর দিবি না ?” নিৰ্ম্মল করষোড়ে বলিল, “দুনিয়া হুজুরের । কিন্তু রসন। অামার । আমি যাহা না বলিব, দুনিয়ার বাদশাহ তাহ কিছুতেই বলাইতে পারিবেন না ।” ঔরঙ্গ । তা না পারি, যে রসনার বড়াই করিতেছ, তা এখনই তাতারী প্রহরিণীর হাতে কাটিয়া ফেলিয়া কুকুরকে খাওয়াইতে পারি। নিৰ্ম্মল । দিল্লীশ্বরের মরূজি । কিন্তু তাহা হইলে যে সংবাদ আপনি খুজিতেছেন, তাহ প্রকাশের পথ চিরকালের জন্য বন্ধ হুইবে । ঔরঙ্গ । সেই জঙ্গ তোমার জিভ রাখিলাম। তোমার প্রতি এই হুকুম দিতেছি যে, আগুন জালিয়া তোমাকে কাপড়ে মুড়িয়া, একটু একটু করিয়া তাতারীর পোড়াইতে থাকুক। আমার কথায় যাহা বলিবে না, আগুনের জ্বালায় তাহ বলবে । নিৰ্ম্মলকুমারী হাসিল । বলিল, “হিন্দুর মেয়ে আগুনে পুড়িয়া মরিতে ভয় করে না । হিন্দুস্থানের বাদশাহ কি কখন শুনেন নাই যে, হিন্দুর মেয়ে হাসিতে হাসিতে স্বামীর সঙ্গে জ্বলন্ত চিতায় চড়িয়া পুড়িয়া মরে ? আপনি যে মরণের ভয় দেখাইতেছেন, আমার মা মাতামহী প্রভৃতি পুরুষানুক্রমে সেই আগুনেই মরিয়াছেন । আমিও কামনা করি, ষেন ঈশ্বরের কৃপায় আমিও স্বামীর পাশে স্থান পাইয়। আগুনে জীবন্ত পুড়িয়া মরি ” বাদশাহ মনে মনে বলিলেন, “বাহবা ! বাহব৷ ” প্রকাশ্বে বলিলেন, “সে কথার মীমাংসা পরে করিব । আপাততঃ তুমি এই মহলের একটা কামরার ভিতর চাবিবন্ধ থাক। ক্ষুধাতৃষ্ণায় কাতর হইলে কিছু ! খাইতে পাইবে না। তবে যখন নিতান্ত প্রাণ যায় বিবেচনা করিবে, তখন কবাটে বা মারিও, প্রহরীরা দ্বার খুলিয়া দিয়া আমার কাছে লইয়া যাইবে । তখন আমার নিকট সকল উত্তর দিলে, পান আহার করিতে পাইবে ।”