পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Gb মবারক। এক রকম—আন্দাজী আন্দাজী। বিলম্বে কাজ কি ? বখশী । কিছু না । * তখন মবারক জুতা খুলিয়া একটা পিঞ্জরের উপর প দিলেন । সর্প গর্জাইয়া আসিয়া পিজরার ছিদ্রমধ্য হইতে দংশন করিল। দংশনজালায় মবারক একটু মুখ বিকৃত করিলেন । বখশীকে বলিলেন, “সাহেব ! যদি কেহ জিজ্ঞাসা করে যে, মবারক কেন মরিল, তখন মেহেরবানি করিয়া বলিবেন, শাহজাদী অালম জেব-উল্লিস বেগম সাহেবার ইচ্ছ। ” * বখশী সভয়ে অতি কাতরভাবে বলিলেন, "চুপ! চুপ! এটাও ” যদি একটা সাপের বিষ না থাকে, এ জন্য দুইটা সৰ্পের দ্বারা বধ্য ব্যক্তিকে দংশন করান রীতি ছিল । মবারক তাহ জানিতেন । তিনি দ্বিতীয় পিঞ্জরের উপর পা রাখিলেন, দ্বিতীয় মহাসর্পও র্তাহাকে দংশন করিয়া তীক্ষুবিষ ঢালিয়া দিল । মবারক তখন বিষের জ্বালায় জর্জরীভূত ও নীল...কান্তি হইয়া, ভূমে জানু পাতিয়া বসিয়া যুক্তকরে ডাকিতে লাগিল, “আল্লা আকৃবর ! যদি কখনও তোমার দয়া পাইবার যোগ্য কার্য্য করিয়া থাকি, তবে এই সময়ে দয়া কর ।” এইরূপে জগদীশ্বরের ধ্যান করিতে করিতে, তীব্র সর্পবিষে জর্জরীভূত হইয়া, মোগলবীর মবারক আলি প্রাণত্যাগ করিল। ass=s* অষ্টম পরিচ্ছেদ সব সমান রঙ মহালে সকল সংবাদই আসে—সকল সংবাদই জেব-উন্নিসা নিয়া থাকেন—তিনি নাএবে বাদশাহ । মবারকের বধ-সংবাদও আসিয়া পৌছিল । জেব-উল্লিস প্রত্যাশা করিয়াছিলেন যে, তিনি এই সংবাদে অত্যন্ত মুখী হইবেন । সহসা দেখিলেন যে, ঠিক বিপরীত ঘটিল। সংবাদ আসিবামাত্র সহস৷ তাহার চক্ষু জলে ভরিয়া গেল—এ শুকনা মাটীতে কখন জল উঠে নাই । দেখিলেন, কেবল তাই নহে, গও বাছিয়া ধারায় ধারায় সে জল গড়াইতে লাগিল । শেষ দেখিলেন, চীৎকার করিয়৷ কঁাদিতে ইচ্ছা করিতেছে। জেৰ উল্পিসা দ্বার রুদ্ধ করিয়া হস্তিদন্তনিৰ্ম্মিত রত্নখচিত পালঙ্কে শয়ন করিয়া কঁাদিতে লাগিলেন । শাহজাদী বলিয়। বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী কৈ শাহজাদী ? হস্তিদন্তনিৰ্ম্মিত রত্নদণ্ডভূষিত পালঙ্কে শুইলেও ত চক্ষুর জল থামে না । তুমি যদি বাহিরে গিয়া দিল্লীর সহরতলীর ভগ্নকুটার মধ্যে প্রবেশ করিতে, তাহা হইলে দেখিতে পাইতে, কত লোক ছেড়া কাথায় শুইয়া কত হাসিতেছে। তোমার মত কান্না কেহই কঁাদিতেছে না । জেব-উন্নিসার প্রথমে কিছু বোধ হইল যে, র্তাহার আপনার সুখের হানি তিনি আপনিই করিয়াছেন । ক্রমশঃ বোধ হইল - ষে, সব সমান নহে—বাদশাহজাদীরাও ভালবাসে, জানিয়া হউক, না জানিয়া হউক, নারীদেহ ধারণ করিলেই ঐ পাপকে হৃদয়ে আশ্রয় দিতে হয়। জেব-উল্লিস আপন৷ আপনি জিজ্ঞাস করিল, “আমি তাকে এত ভালবাসিতাম ত সে কথা এত দিন জানিতে পারি নাই কেন ?” কেহ তাহাকে বলিয়া দিল না যে, ঐশ্বৰ্য্যমদে তুমি অন্ধ হইয়াছিলে, রূপের গৰ্ব্বে তুমি অন্ধ হইয়াছিলে, ইন্দ্রিয়ের দাসী হইয়। তুমি ভালবাসাকে চিনিতে পার নাই । তোমার উপযুক্ত দণ্ড হইয়াছে—কেহ যেন তোমাকে দয়া না করে । কেহ বলিয়া না দিকৃ—তার নিজের মনে এ সকল কথ। কিছু কিছু আপন! আপনি উদয় হইতে লাগিল। সঙ্গে সঙ্গে এমনও মনে হইল, ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম বুঝি আছে। যদি থাকে, তবে বড় অধৰ্ম্মের কাজ হুইয়াছে । শেষ ভয় হইল, ধৰ্ম্মাধম্মের পুরস্কার দণ্ড যদি থাকে? তাহার পাপের যদি দণ্ডদাতা কেহ থাকেন ? তিনি বাদজেব-উন্নসাকে মার্জন করিবেন কি ? সম্ভব নয় । জেব-উল্লিসার মনে ভয়ও হইল । দুঃখে, শোকে, ভয়ে জেবউন্নিসা দ্বার খুলিয়৷ তাহার বিশ্বাসা খোজা আসিরদীনকে ডাকাইল । সে অসিলে ভাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “সাপের বিষে মাকুয মরিলে তার কি চিকিৎসা আছে ?” আসিরদীন বলিল, “মরিলে আর চিকিৎসা কি ?” জেব । কখনও শুন নাই ? অসি । হাতেম মাল এমনই একটা চিকিৎসা করিয়াছিল, কানে শুনিয়াছি, চক্ষে দেখি নাই । জেবাউন্নিসা একটু ইপি ছাড়িল ৷ বলিল, “হাতেম মালকে চেন ?” আসি । জেব } আসি । জেব } আসি । চিনি । সে কোথার থাকে ? দিল্লীতেই থাকে । বাড়া চেন ? চিনি ।