পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গবিজেতা ! &bఫి রাজ। “ নিবেদন কর, তোমাকে আমার আদেয় কিছুই নাই।” ইন্দ্র । “আপনি শকুনিকে ধরিবার জন্য চতুৰ্ব্বেষ্টিত দুর্গে লোক পাঠাইতেছেন,--আদেশ করুন আমি সে কাৰ্য্য সম্পাদন করিব।” রাজা । “কেন, ইন্দ্রনাথ কি আমাদের অন্য সৈন্তের উপর প্রত্যয় করেন না ?” ইন্দ্র । “ মহারাজ ! সে জন্য নহে, অন্ত কারণ আছে," বলিয়া ইন্দ্রনাথ লজ্জায় মুখ অবনত করিলেন। রাজা । “আমাদের কোন কথাই আমরা ইন্দ্রনাথের নিকট গোপন রাখি না, ইন্দ্রনাথের কি আমাদিগের নিকট গোপন রাখিবার কোন কথা আছে ?” ইন্দ্রনাথ অধিকতর লজ্জিত হইয়। বলিলেন, " মুঙ্গের আদিবার সময় এক জনের নিকট পূর্ণিমা তিথিতে বিদায় লইয়া আসিয়াছিলাম,—প্রতিজ্ঞ করিয়াছিলাম, সপ্তম পূর্ণিমার মধ্যে পুনরায় দেখা করিব। তিনি এক্ষণে চতুৰ্ব্বেষ্টিত দুর্গে আছেন, সেই জন্য আমার এই ভিক্ষা ।” e রাজা । ‘ কাহার নিকট প্রতিজ্ঞ,পাশে বদ্ধ আছে, মে তাহার কার্য্যের জন্য এরূপ ব্যাকুল হইতেছ ?” 峻 ইন্দ্রনাথ অধিকতর লজ্জিত হইয় অধোবদনে রহিলেন। রাজা সহস্যবদনে বলিলেন—“ আচ্ছি। যাও, কিন্তু আমরা আকবরসাহকে পত্র লিখিব, যে একজন নবীন সেনাপতি বিদ্রোহী হইয়াছেন–দিল্লীশ্বরের কার্য পরিত্যাগ করিয়া আপন হৃদয়েশ্বরীর কার্ষ্যে প্রবৃত্ত হইয়াছেন।” - ইন্দ্রনাথ সম্মতি পাইয়। সেইদিনই মুঙ্গের ত্যাগ করিলেন। তাহার পূৰ্ব্বপরিচিত বন্ধু নাবিকের নৌকায় উঠলেন । ইন্দ্রনাথের অনুরোধে, অনাথ নিরাশ্রয় বিমলাও অপর একটী নৌকায় উঠলেন, সঙ্গে সঙ্গে চতুৰ্ব্বেষ্টিত দুর্গাভিমুখে যাইতে লাগিলেন। বিমলা এক্ষণে আর পূর্বমত নাই । তাহার বদনমণ্ডল রক্তশূন্ত ও পাণ্ডুবর্ণ হইয়াছিল, চক্ষু কোটরপ্রবিষ্ট, অথচ নয়নের তারা অনৈসর্গিক উজ্জলতায় ধক্ ধক্ করিয়া জলিতেছিল । তাহার কথার স্বর শুনিয়া ইন্দ্রনাথ চমকিত হইলেন, শ্মশানের নৈশবায়ুর ন্যায় ভীষণ ও নৈরাশ-প্রকাশক । আজি বিমলার হৃদয়ের আশা ভরসা সকলই দগ্ধ হইয়াছে,--ইন্দ্রনাথের প্রতি যে অনুরাগ ছিল, তাহাও সেই ঘোর সন্তাপাগ্নিতে দগ্ধ হইয়াছিল, হৃদয় প্রকৃত দগ্ধ শ্মশান হইয়াছে। এ অনন্ত জগতে কত অভাগিনীর মায়ার সমস্ত বস্তুই একে একে কালগ্রাসে পতিত হর,-কত আতাগিনীর হৃদয় শূন্য শ্মশানের ন্যায় হয়, তাহা কে বলিবে ?