পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৮৮
বঙ্গ-গৌরব

এবং সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন ছিলেন অপর পক্ষের ব্যারিস্টার। মিঃ ফার আইনজ্ঞ ব্যক্তি। সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন এরূপ ব্যক্তিকে এমন দক্ষতা সহকারে জেরা করেন যে, অন্যান্য আইনব্যবসায়ীরা এবং জনসাধারণ সকলেই বিস্ময়াভিভূত হন। এই এক মোকদ্দমাতেই তিনি খ্যাতি লাভ করেন। ইহার পর বড় বড় মামলায় লোকে তাঁহাকে নিযুক্ত করিবার জন্য ব্যগ্র হইয়া উঠে এবং তাঁহার ব্যবসায় প্রসারতা লাভ করে। ক্রমে তাঁহার পসারপ্রতিপত্তি এরূপ বৃদ্ধি পায় যে গভর্নমেন্ট ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁহাকে Standing Counselএর পদে নিযুক্ত করেন। দুই বৎসর এই কার্য সুচারুরূপে নির্বাহ করিবার পর ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে এপ্রিল হইতে অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসের জন্য তিনি অস্থায়ীভাবে Advocate General-এর পদে নিযুক্ত হন। পর ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে তিনি দ্বিতীয় বার ঐ পদে নিযুক্ত হন এবং তিন মাস পরেই তাঁহাকে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত করা হয়।

 গভর্নমেন্ট তাঁহার কার্যদক্ষতায় এতই সম্ভোয় লাভ করেন যে, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের প্রারম্ভে ভারত গভর্নমেন্টের Executive Council-এর ব্যবস্থা-সচিবের আসন শূন্য হইলে তৎকালীন বড়লাট লর্ড মিন্টো সত্যেন্দ্রপ্রসন্নকে ঐ পদে নিযুক্ত করিবার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন এবং ভারত-সচিব লর্ড মর্লে তাহাতে সম্মত হন। ভারত-সম্রাটও ইহার অনুমোদন করেন। তদনুসারে ১৯০৯ সালের ২৩ মার্চ এই নিয়োগের সংবাদ সরকারি গেজেটে ঘোষিত হয়। ভারতবাসীদের মধ্যে সত্যেন্দ্রপ্রসন্নই সর্বপ্রথম এই পদ লাভ করেন। ১৭ এপ্রিল তিনি যখন নূতন কার্যভার গ্রহণ করেন, তখন তোপধ্বনি করিয়া এই সংবাদ ঘোষণা করা হইয়াছিল। এক বৎসর এই পদে কার্য করিবার পর তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।  ইহার পর তিনি আবার কলিকাতা হাইকোর্টে পূর্ববৎ ব্যারিস্টারি কার্য করিতে থাকেন। অর্থ ও সম্মান প্রচুর পরিমাণেই তাঁহার অধিগত হইতে থাকে। ইহার উপর রাজসম্মানও তাঁহার লাভ হইতে লাগিল—১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি নববর্ষের উপাধি বিতরণ উপলক্ষে তিনি 'নাইট উপাধি প্রাপ্ত হইলেন।

 ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় মহাসমর আরম্ভ হয়। যুদ্ধকার্য পরিচালনের জন্য যে যুদ্ধ পরিষদ (War Council গঠিত হয়, ভারতবর্ষ হইতে তাহাতে কয়েকজন প্রতিনিধি প্রেরণের ব্যবস্থা হয়। তদনুসারে ভারত গভর্নমেন্ট স্যার জেম্স্ মেস্টন ও বিকানীরের মহারাজার সহিত স্যার মতোন্দ্রপ্রসন্ন সিংহকে বিলাতে প্রেরণ করেন।

 কিছুদিন পরে স্যার সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন স্বদেশে প্রত্যাবৃত্ত হইলে বঙ্গীয় গভর্নমেন্ট তাঁহাকে বাংলা গভর্নমেন্টের শাসন পরিষদের অন্যতম সদস্য পদে নিযুক্ত করেন।

 ইউরোপীয় মহাসমর শেষ হইলে সন্ধির কথাবার্তা আরম্ভ হয়। এই সন্ধি-সভায় (Peace Conference) যোগ দিবার জন্য ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রতিনিধির সহিত স্যার্ সত্যেন্দ্রপ্রসন্নও সদস্যরূপে পুনরায় ইউরোপে গমন করেন।

 সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হইলে স্যার সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন যখন বিলাতে গমন করেন, তখন তাঁহাকে পুরুষানুক্রমে লর্ড উপাধি দিয়া বিলাতি অভিজাত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করিয়া চূড়ান্তরূপে