পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা রামমোহন রায় করিবেন না বলিয়াই স্থির করিয়াছিলেন। কিন্তু পাছে মিথ্যার জয় হয়, এই আশঙ্কা করিয়া অনিচ্ছায় মাতার সহিত তেঁহকে মোকদ্দমায় লিপ্ত হইতে হইল। বিচারে রামমোহনের জয় হইয়াছিল। কিন্তু তিনি জয়ের পর সমস্ত সম্পত্তি মাতৃচরণে অর্পণ করিতে দ্বিধা বোধ করেন নাই। মা পুত্রের মহত্ত্ব বুঝিতে পারিয়া শেষে অনুতপ্ত হইয়াছিলেন। করিয়াছিল, তেমনি তঁহার পাণ্ডিত্য, সত্যানুরাগ, তেজস্থিতা আর একদল লোককে তঁাহার অনুরাগী করিয়া তুলিয়ছিল। তঁহার এই অনুরাগীদের ভিতর ডিগবি” সাহেব ছিলেন একজন। ডিগবি যখন রংপুরের কালেক্টর, তখনই তিনি রামমোহনকে রাজকাৰ্যে নিয়োগ করেন। চাকুরির জন্য আবেদন করিবার সময়েও তিনি তঁাহার নিভীক তেজস্বিতার পরিচয় দিয়াছিলেন। রামমোহন তাহার দরখাস্তে লিখিয়াছিলেন--তিনি উপরওয়ালাদের কাহারও কাছে হীনতা স্বীকার করিতে পরিবেন না; সকলের সঙ্গে তাহাকেও বসিবার জন্য সমানভাবে চেয়ার দিতে হইবে; তিনি কাহারও কাছে সেলাম ঠুকিয়া ঘাড় নীচু করিয়া দাঁড়াইবেন না। চব্বিশ বৎসর বয়সে রামমোহন রাজকাৰ্য গ্রহণ করেন। রাজকর্মচারীরূপে তিনি যে দক্ষতা দেখাইয়াছিলেন, তাহাতেও তঁহার প্রতিভার পরিচয় সুপরিস্ফুট। তঁহার চেষ্টায় গবর্নমেন্ট অফিস হইতে ঘুষ লওয়া বন্ধ হইয়াছিল; প্রজারা ন্যায় বিচার লাভ করিত; এবং বহু অত্যাচার দূর হইয়াছিল। গবর্নমেন্টও তাহার কৃতিত্বকে পুরস্কৃত করিয়াছিলেন। তিনি ক্ৰমে ক্ৰমে দেওয়ানের পদে উন্নীত হন। ইহা অপেক্ষা অধিকতর সম্মানের পদ তখনকার দিনে আর কোন বাঙালি লাভ করেন নাই। রামমোহন ১৩ বৎসর রাজকাৰ্য করিয়াছিলেন। তাব।পর ৩৭ ৷৷ ৩৮ বৎসর বয়সে একস্তভাবে আপনাকে সংস্কারের কার্যে নিযুক্ত করিবার জন্য তিনি রাজকাৰ্য পরিত্যাগ করেন। এই সময়ে মাতার সহিত এই সংস্কার ব্যাপার লইয়া তাহার। আবার মতদ্বৈন্ধের সৃষ্টি হইল। রামমোহন এবার স্বেচ্ছায় পিতৃগৃহ পরিত্যাগ করিয়া রঘুনাথপুরে আসিয়া বাড়ি করিলেন এবং সেই বাড়িতে একটি বেদি প্রস্তুত করাইয়া তাহার সম্মুখে লিখিয়া দিলেন“ওঁ তৎসৎ, একমেবাদ্বিতীয়ম।” বর্তমান ব্ৰাহ্মধর্মের ভিত্তি এইরূপে সেইখানেই প্ৰথম ਚਿਲੇਠ | ৪০ বৎসর বয়সে রামমোহন কলিকাতায় বাস করিবার জন্য আগমন করিলেন। র্তাহার গৃহে সেই সময় আত্মীয়সভা” নামে একটি সভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সভায় বেদপাঠ, পূৰ্ণব্রহ্মের উপাসনা, ভগবানের নামগান প্রভৃতি করা হইত। তিনি নামগানের জন্য নিজে কতকগুলি ব্ৰহ্মসঙ্গীত” রচনা করিয়াছিলেন। কিন্তু, একদিকে যেমন ধীরে ধীরে তঁহার ধর্মমত দেশের শিক্ষিত সমাজের মনে রেখা কাটিতে লাগিল, অন্যদিকে আবার তেমনি তঁহার বিরুদ্ধে একটি পরাক্রান্ত দলের ও সৃষ্টি হইল। রাজা রাধাকান্ত দেব বাহাদুরই এই দলের সভাপতি হইয়া দেশবিদেশ হইতে বিখ্যাত পণ্ডিতের দল আনিয়া রামমোহনকে শাস্ত্ৰতর্কে পরাজিত করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিন্তু, রামমোহনের তীরু