পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

We বঙ্গ-গৌরব প্ৰতিভার কাছে তাহারা কেহই টিকিতে পারেন নাই। এই সময় কতকগুলি শক্তিমান লোক রামমোহনের দলে যোগদান করেন। তঁহাদিগকে লইয়াই আদি-ব্ৰাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠা হয়। পণ্ডিতশ্রেষ্ঠ রামচন্দ্ৰ বিদ্যাবাগীশ** এই অন্দি-ব্ৰাহ্মসমাজের সর্বপ্রথম আচার্য। অনেকে রামমোহনকে বিধমী, নাস্তিক বলিয়া প্রচার করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিন্তু, তিনি প্রকাশ্য সভায় দাঁড়াইয়া স্পষ্ট ভাষায় ইহার প্রতিবাদ করিয়া বলিয়া গিয়াছেনতিনি পরম হিন্দু-এমন কি তিনি নুতন ধর্ম-প্রচারকও নহেন। আর্যর্থষিদের সনাতন ধর্মের ভিতর কুসংস্কার প্রবেশ করিয়া যে জঞ্জাল ও গ্লানির সৃষ্টি করিয়াছে, তিনি সেই কুসংস্কারের হাত হইতে দেশকে মুক্ত করিতে চেষ্টা করিতেছেন মাত্র। রামমোহনের প্রণীত গ্রন্থের** সংখ্যা ৭০ খানা। ইহার ৩২ খানা বাংলায় লিখিত এবং ৩৮ খানা ইংরেজিতে লিখিত। সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস প্রভৃতি শাস্ত্ৰে তাহার বুৎপত্তি যে কত গভীর ছিল, এই পুস্তকগুলি পাঠ করিলেই তাহা বোঝা যায়। ইহা ছাড়া তিনি অনেকগুলি সাময়িক পত্রিকারও সম্পাদকতা করিয়াছিলেন। ইহাদের ভিতর ‘ব্রাহ্মণ** নাস্ত্রী একখানি পত্রিকার সম্পাদনায় রামমোহন ‘শিবপ্রসাদ শৰ্মা’ ছদ্মনাম ব্যবহার করিয়াছিলেন। শ্ৰীীরামপুরের পাদরিদের পরিচালিত ‘সমাচার চন্দ্ৰিকা’** নামী পত্রিকায় মিথ্যা কুৎসার প্রতিবাদকল্পে উহার জন্ম হয়। কিন্তু তঁহার ছদ্মবেশ ধরা পড়িতেও বিলম্ব হয় নাই। রচনার অসাধারণ পণ্ডিত্য ও যুক্তিই তাঁর ছদ্মবেশ ধরাইয়া দিয়াছিল। রামমোহনের যুক্তি-তর্ক, তাহার পণ্ডিত্য, সর্বধর্মে তাহার গভীর জ্ঞান-বাহু ইংরেজের শ্রদ্ধা ও ভক্তি আকর্ষণ করিয়াছিল। কলকাতার ‘ব্যাপটিস্ট্র মিশনের বড় পাদরি এ্যাডাম** সাহেব ত রামমোহনের কাছে দীক্ষাই গ্রহণ করিয়াছিলেন। তখনকার-ইতিহাসে এরূপ ঘটনার উদাহরণ আর একটিও পাওয়া যায় না। সমাজ-সংস্কারের দিক হইতেও রামমোহনের দাবি কোন সংস্কারকের অপেক্ষা কম। নহে। তখনকার দিনে স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীকেও স্বামীর চিতায় দাহ করা হইত। এই প্রথার নাম ছিল সতীদাহ।** ব্যাপারটা হৃদয়বিদারক হইলেও পাছে হিন্দুধর্ম এবং সমাজের প্রতি হস্তক্ষেপ করা হয়, এই আশঙ্কায় গবর্নমেন্ট এ প্ৰথােটাকে তুলিয়া দিতে চেষ্টা করেন। নাই। রামমােহনই আন্দােলন, আলোচনার দ্বারা ইহার অযৌক্তিকতা প্রমাণ করেন। বড়লাট সার উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের ১৭। কাছে তিনি ইহার বিরুদ্ধে যে দরবার করিয়াছিলেন, তাহারই ফলে আইন করিয়া সতীদাহ উঠাইয়া দেওয়া হয়। ইহা ছাড়া কৌলীন্যপ্ৰথা, বালিকাবিবাহপ্রথা, কুলীন কন্যাগণকে চিরকুমারী করিয়া রাখিবার প্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধেও তিনি প্রাণপণ যুদ্ধ করিয়াছিলেন। তঁহার চেষ্টায় হিন্দু রমণীদের অনেক কষ্ট দূরীভূত হইয়াছিল। দেশে ইংরেজি-শিক্ষার প্রচলনও বহুল পরিমাণে রামমোহনের চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের ফল। ইংরেজি ১৮৩০ অব্দের ১৫ নভেম্বর রামমোহন বিলাত যাত্রা করেন। সেই সময় দিল্লির বাদশাহের সহিত ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির কতকগুলি বিষয় লইয়া গোলমাল চলিতেছিল। পার্লামেন্টে আন্দোলন উপস্থিত করিবার জন্য বাদশাহ উপযুক্ত লোক খুজিতেছিলেন। রামমোহন স্বীকৃত হইতেই বাদশাহ তাহাকে ‘রাজা” উপাধি দিয়া বিলাত