পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SqCo বঙ্গ-গৌরব যে ঢেউ জাগিয়া উঠিয়াছিল, তঁহাদের শিক্ষা সেই ঢেউটার পথ রোধ করিয়া দাঁড়াইল । বস্তুত কেশবচন্দ্রই তখনকার স্রোত ফিরাইয়া দিয়াছিলেন। রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্মধর্মের প্রবর্তক হইলেও তাহার সময় উহা জনপ্রিয় হইতে পারে নাই। কেশবচন্দ্ৰই উহাকে শিক্ষিত সমাজের গ্রহণীয় করেন। র্তাহার পূর্বে এখনকার মত ব্ৰাহ্ম বলিয়া কোন পৃথক সম্প্রদায় ছিল না। যাহারা উক্ত ধর্ম গ্ৰহণ করিয়াছিলেন, র্তাহারা সমাজের ভিতর থাকিয়াই এবং হিন্দুধর্ম মতে সমস্ত ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখিয়াই সপ্তাহে একদিন ব্ৰহ্মমন্দিরে আসিয়া উপাসনা করিয়া যাইতেন। ব্ৰাহ্মা বলিয়া এখন যে পৃথক সম্প্রদায় গঠিত হইয়াছে, তাহা কেশবচন্দ্রেরই সৃষ্টি। তিনি ব্ৰাহ্মধর্মের জন্য কতকগুলি কড়াকড়ি নিয়ম বধিয়া দিলেন। ব্ৰহ্মচর্য পালন, নিরামিষ আহার, মাদক দ্রব্য পরিত্যাগ, পরিচ্ছদে বিলাসবর্জন—এগুলি ব্ৰাহ্ম ধর্মের বিশেষ অঙ্গরাপে পরিগণিত হইল। বাড়ির লোকের পীড়াপীড়িতে কেশবচন্দ্ৰকে ইং ১৮৫৯ অব্দে একটি চাকুরি গ্রহণ করিতে হইয়াছিল। বেঙ্গল ব্যাঙ্কের চাকুরি, বেতন ৩০ টাকা। এই চাকুরিতেও তাহার কর্তব্যনিষ্ঠার পরিচয় পাওয়া যায়। উপরওয়ালারা তাহার কাজে সন্তুষ্ট হইয়া অল্পদিনের ভিতরেই তাহার বেতন বাড়াইয়া দেন এবং ভবিষ্যতে অধিক উন্নতিরও আশা দেন। কিন্তু ধর্ম যাহাকে ডাকিয়াছে, কর্মস্থলের প্রলোভন তাহকে বধিয়া রাখিতে পারিল না। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনি চাকুরি ছাড়িয়া দিলেন।” এই চাকুরির সময়েই তিনি একখানা পুস্তক লিখিয়াছিলেন। তাহার নাম—“হে বঙ্গীয় যুবকগণ, ইহা তোমাদেরই জন্য।” এই পুস্তক তৎকালীন যুবকদের ভিতর যথেষ্ট আন্দোলন জগাইয়া তুলিয়াছিল। ইহার পর মহর্ষি কেশবচন্দ্ৰকে ব্ৰাহ্মসমাজের আচার্যের পদ গ্ৰহণ করিবার জন্য আহ্বান করিলেন। দিন ধার্য হইল। কেশবচন্দ্ৰ স্থির করিলেন, পত্নীসহ সেদিন তিনি ঠাকুরবাড়ির ব্ৰাহ্মসমাজে উপস্থিত হইয়া আচার্য পদ গ্রহণ করিবেন; এবং সে কথা আত্মীয়স্বজনকে জানাইতেও তিনি দ্বিধা বোধ করিলেন না। কিন্তু ইহাতে এক নূতন বিভ্রাটের সৃষ্টি হইল। যাত্রার সময় তিনি দেখিতে পাইলেন, বাড়িব কর্তাব হুকুম-মত সদর দরজা বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে এবং আত্মীয়স্বজনেরাও চারিদিক হইতে র্তাহাদিগকে ঘিরিয়া তাহাদের বহির্গমনে বাধা সৃষ্টি করিবার চেষ্টা করিতেছেন। কিন্তু তিনি বিচলিত হইলেন না। পত্নীকে ৭ ডাকিয়া কহিলেন—“এই আমাদের শক্তি-পরীক্ষার সময়। তুমি হয় সকল বাধা পদদলিত করিয়া আমার অনুগমন কর, নতুবা আমাকে ছাড়িয়া ইহাদের সঙ্গেই বাস কর। আমাকে সত্য পথ হইতে ভ্ৰষ্ট করে এমন কেহই নাই।” ইহার পর তিনি দৃঢ়পদে অর্গল খুলিয়া বাহির হইয়া আসিলেন। সত্যসত্যই কেহ তাহাকে বাধা দিতে পারিল না। পত্নীও তাহার অনুগামিনী হইলেন। ১৮৬২ অব্দের ১৬ এপ্রিল দেবেন্দ্ৰনাথ কেশবচন্দ্ৰকে ‘ব্ৰহ্মানন্দ’ উপাধি দিয়া আদি ব্ৰাহ্মসমাজের আচার্য পদে’ অভিষিক্ত করেন। ইহার পর হইতে কেশবচন্দ্রের সহিত র্তাহার পরিবারের সকলের সম্বগ্ধ ঘুচিয়া যায়। তিনি গৃহত্যাগ করিয়া প্রথমে কিছুদিন দেবেন্দ্রনাথের গৃহে আশ্ৰয় লন - তাহার পর কলুটােলায় একটি ছোট বাড়িতে উঠিয়া আসেন। এই বাড়িতে তিনি যখন অত্যন্ত অসুস্থ