পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী বিবেকানন্দ Šዓዒ ধর্মের পথ বাছিয়া লইয়াছিলেন, শিষ্যকে তিনি দান করিলেন--কর্মের পথ। ‘আপনার মুক্তি অপেক্ষা জগতের কল্যাণ শ্রেষ্ঠ কার্য। একটি মাত্ৰ জীবের কল্যাণের জন্য যদি বারংবার কুকুর হইয়া জন্মিতে হয়—আমি তাহাতেই রাজি”-রামকৃষ্ণের এই বাণীই বিবেকানন্দের জীবনের তপস্যা ছিল। তিনি জনহিতে আত্মোৎসর্গ করিয়া গিয়াছেন। গুরু কর্মত্যাগ করিয়াছিলেন, শিষ্যের দেহত্যাগ পর্যন্ত কর্মের বিরাম ছিল না। পরমহংসদেবের নিকট হইতে দীক্ষা লইয়া নরেন্দ্ৰনাথ সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি গৈরিক বসন পরিধান করিতেন। দীপ্ত চক্ষু, দিব্যশ্ৰী এবং গৈরিক বসনে তঁহাকে অপূর্ব দেখাইত। গুরুর দেহাবসানের পর তিনি ভারতভ্ৰমণে বাহির হন। ভারতের প্রায় সমস্ত প্রধান স্থানই তিনি পরিভ্রমণ করিয়াছিলেন। এই সময় ভারতের অনেকগুলি করদ ও মিত্ররাজ্যের রাজাদের সঙ্গেও তাহার পরিচয় হয়। আলোয়ারের রাজার’ সঙ্গে পরিচয় একটু বিচিত্র। এইজন্য এখানে তাহার উল্লেখ করিতেছি। ঘুরিতে ঘুরিতে তিনি যখন আলোয়ারে উপস্থিত হইলেন, তখন ইংরেজি-জােনা সন্ন্যাসী বলিয়া চারিদিকে তাহার নাম ছড়াইয়া পড়িয়াছে। তাহার সঙ্গে আলাপ করিবার জন্য আলোয়ারের রাজার কৌতুহল হইল। তিনি বিবেকানন্দের সহিত দেখা করিয়া বলিলেন“শুনিয়াছি আপনি খুব বিদ্বান লোক-আপনি অর্থ উপাৰ্জন না করিয়া ভিক্ষা করেন কেন?” বিবেকানন্দ দেখিলেন আচার-ব্যবহারে এই রাজ্যটি পুরা মাত্রায় বিদেশী। তিনি যে সাহেব সুবার সঙ্গে শিকার করিয়া বেড়ান, সে সংবাদও স্বামীজি লইয়াছিলেন। তাই তিনি বলিলেন-“আপনি রাজকাৰ্য না দেখিয়া কেবল শিকার করিয়া বেড়ান কেন?” উত্তর শুনিয়া রাজা একটু অপ্ৰস্তুত হইয়া গেলেন; পরে উত্তর দিলেন—“আমার ভাল লাগে, তাই শিকার করি।” স্বামীজি উত্তর দিলেন- “আমারও ভাল লাগে, তাই ভিক্ষা করি।” তারপর নানা কথা হইল। রাজা কহিলেন, মূর্তি-পূজায় তাহার আস্থা নাই। ইট কাঠ পাথরকে পূজা করিয়া কোন লাভ নাই। এই কথার পর দেওয়াল হইতে রাজার একখানা ফটাে নামাইয়া আনিয়া স্বামীজি রাজার পরিষদবৰ্গকে সেই ছবির উপর নিষ্ঠীবন ত্যাগ করিবার অনুরোধ করিলেন। কিন্তু সে অনুরোধ যখন প্রতিপালিত হইল না, তখন রাজাকে সম্বোধন করিয়া তিনি কহিলেন“মহারাজ! এটা আপনার ছবি, আপনি নহেন ; তবু ইহার গায়ে কেহ যে খুথু ফেলিতে সম্মত হইল না, তাহার কারণ এটাকে কেহই সামান্য এক টুকরা কাগজ বলিয়া মনে করিতে পারিতেছে না। আপনার এই আলেখ্যকে সকলে আপনার প্রতিমূর্তি বলিয়াই শ্রদ্ধা করিতেছে। হিন্দুরাও যখন মূর্তিপূজা করে, তখন ইট, কাঠ, পাথরের পূজা করে না, তাহারা পূজা করে তাহাদের ইষ্ট দেবতার। দেবতার গুণের এক একটি আদর্শ লইয়া এই মূর্তিগুলি পরিকল্পিত।” স্বামীজির উত্তর শুনিয়া মহারাজ বলিলেন-“আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আমার চোখ খুলিয়া দিলেন।” এই পরিভ্রমণের সময়েই রাজপুতনার খেতরি রাজ্যের রাজা ° তাহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন।