পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুরেন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতবর্ষের রাজনীতি-ক্ষেত্রে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুল্য ব্যক্তি অতি অল্পই জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতার তালতলায় এক সম্রাস্ত ব্ৰাহ্মণ-বংশে সুরেন্দ্রনাথের জন্ম হয়। র্তাহার পিতা দুৰ্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তৎকালে কলিকাতার একজন প্ৰসিদ্ধ ডাক্তার ছিলেন। শৈশব হইতেই সুরেন্দ্রনাথের বুদ্ধির প্রখরতা পরিলক্ষিত হইত। কলেজের পরীক্ষায় প্রতি বৎসর কৃতিত্ব দেখাইয়া তিনি পুরস্কার লাভ করিয়াছিলেন। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে পনেরো বৎসর বয়সে তিনি কলিকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে বি-এ উপাধি লাভ করেন। কলেজে পড়ার সময় কলেজের অধ্যক্ষ মিঃ সাইম সুরেন্দ্রনাথের প্রতিভা দর্শনে তঁহার প্রতি বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট হইয়াছিলেন এবং তঁহার আগ্রহেই দুর্গাচরণ পুত্ৰকে বিলাতে আই. সি. এস পড়িবার জন্য পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। বিলাতে গিয়া সুরেন্দ্রনাথ যথাসময়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইলেন বটে, কিন্তু আর এক বিভ্ৰাট উপস্থিত হইল। যে বয়সের মধ্যে এই পরীক্ষায় পাশ করিবার নিয়ম সুরেন্দ্রনাথের বয়স তােহা অতিক্ৰম করিয়াছে, এই আপত্তি করিয়া পরীক্ষকগণ র্তাহার কৃতকার্যতা নামঞ্জুর করিয়া দিলেন। কিন্তু সুরেন্দ্রনাথ ছাড়িবার পাত্র ছিলেন না। এই ব্যাপার লইয়া তিনি মহারানির দরবারে আর্জি পেশ করিলেন। অবশেষে পরীক্ষকগণকেই পরাজয় স্বীকার করিতে হইয়াছিল; তেঁাহার নাম উত্তীর্ণ ছাত্রদের তালিকাভুক্ত করিয়া কৈফিয়তের হাত হইতে অব্যাহতি লাভ করিয়াছিলেন। দেশে ফিরিয়া সুরেন্দ্রনাথ শ্ৰীহট্টে সহকারী ম্যাজিষ্ট্রেটের পদে নিযুক্ত হন। দুই বৎসর মাত্র তিনি সেই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই সময়ে একটি বিশেষ ঘটনায় তাহার জীবনের গতি ভিন্ন পথে ধাবিত হয়। কোনো একটি মামলার বিচার সুরেন্দ্ৰনাথ অন্যায় ভাবে পরিচালিত করিয়াছেন-গভর্নমেন্ট তাহার বিরুদ্ধে এই ধরনের একটি অভিযোগ আনয়ন করিলেন। সুরেন্দ্রনাথ নিজের নির্দেষিতা প্রমাণ করা সত্ত্বেও কোনো ফল হইল নাতিনি কর্মচ্যুত হইলেন। এই সময়ে তঁহার বয়স ২৩ বৎসর মাত্র। সিভিল সার্ভিসে থাকিলে সুবেন্দ্রনাথ যে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করিতে পারিতেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু তাহার পদচ্যুতি কল্যাণেরই কারণ হইয়াছিল। তিনি সরকারি কার্য হইতে অব্যাহতি লাভ করিয়া আপনাকে সম্পূর্ণভাবে দেশের কাজে উৎসর্গ করিয়া দিতে পারিয়াছিলেন। সুরেন্দ্রনাথের এই দুঃসময়ে প্ৰাতঃস্মরণীয় স্বগীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তঁহাকে নানা প্রকারে সাহায্য করেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আদেশেই সুরেন্দ্রনাথ দুই শত টাকা বেতনে