পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$$ বঙ্গ-গৌরব সেদিনও তিনি যথারীতি হাইকোর্টে যাইয়া অন্যান্য দিনের মত ধীর, স্থির এবং নিরুৎকুণ্ঠভাবে কাৰ্য করিয়ছিলেন। প্রধান বিচারপতি তঁহার পুত্রের অবস্থা জানিতে পারিয়া তঁহাকে বাধ্য করিয়া বাড়িতে পাঠাইয়া দেন। গুরুদাস ফিরিবার কিছুক্ষণ পরেই যতীন্দ্ৰচন্দ্রের মৃত্যু হয়। যতীন্দ্র হেয়ার স্কুলে পড়িত। গুরুদাস তাহার স্মৃতিরক্ষার্থ হেয়ার স্কুলে যতীন্দ্ৰচন্দ্ৰ পদক ও পুরস্কার’ নামে একটি পদক ও পুরস্কার দিবার ব্যবস্থা করিয়া গিয়াছেন। হেয়ার স্কুল হইতে প্ৰবেশিকা পরীক্ষায় যে ছাত্র সর্বপ্রথম স্থান অধিকার করে ঐ পুরস্কার তাহাকেই (&शः शः | ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে গুরুদাস কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলার নিযুক্ত হন। তিনি চারি বৎসর উক্ত পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই চারি বৎসরের কাজের ভিতরেও র্তাহার কর্মকুশলতার পরিচয় পাওয়া যায়। কলিকতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিপূর্বে বাংলা ভাষার কোনো আদর বা সম্মান ছিলনা। গুরুদাসই প্ৰথম সে চেষ্টা করেন এবং তাহার অনেক দিন পরে স্যার আশুতোষের প্রাধান্য সময়ে গুরুদাসের আরাদ্ধ চেষ্টা ফলবতী হয়। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি হাইকোর্টের বিচারপতির আসন হইতে অবসর গ্রহণ করেন। সেই বৎসরেই গভর্নমেন্ট হইতে র্তাহাকে ‘নাইট” বা ‘স্যার” উপাধি দেওয়া হয়। দেশের লোকে যাহাতে সুশিক্ষা পায়, এজন্য গুরুদাস আজীবন চেষ্টা করিয়া গিয়াছেন। নিজে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হইলেও এ কথা তিনি স্পষ্টই বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে, আমাদের দেশের পক্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষা বা আদর্শের ফল তাদৃশ শুভ হইবে না। এইজনা তাহারই উৎসাহ এবং উদ্যম এবং আরও কতিপয় ব্যক্তির সাহায্যে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলা দেশে “জাতীয় শিক্ষা পরিষৎ’ প্ৰতিষ্ঠিত হয়। এই উপলক্ষ্যে কলিকতা টাউন হলে এক বিরাট সভার অধিবেশন হইয়াছিল। সেই সভায় বক্তৃতা দিতে উঠিয়া গুরুদাস বলেন- “শিক্ষার্থীদের মনে স্বদেশের এবং স্বজাতির প্রতি অনুরাগের সঞ্চার করা এবং দেশের লোকের তত্ত্বাবধানে সাহিত্য, বিজ্ঞান, টেকনিক্যাল ও কার্যকরী বহুবিধা বিষয় শিক্ষা দান করাই শিক্ষা পরিষৎ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য। এই শিক্ষা যাহাতে সর্বাঙ্গসুন্দর হয়, তজ্জনা ইহার ভিতরে প্রাচ্য আদর্শ অনুযায়ী ভারতীয় ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন প্রভৃতি শিক্ষার সুব্যবস্থা থাকিবে। সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমের শিক্ষা ও সভ্যতার যতটুকু গ্ৰহণ করা আমাদের পক্ষে কল্যাণকর তাহাও শিখাইবার ব্যবস্থা করা হইবে।” শিক্ষা সম্বন্ধে গুরুদাস অনেক প্রবন্ধ লিখিয়াছেন। সেগুলি একত্র করিয়া “A few thoughts on Education*** নামক ইংরেজি গ্রন্থ প্রকাশিত হইয়াছে। “জ্ঞান ও কর্ম।” নামক তিনি একখানা সুন্দর বাংলা গ্ৰন্থও রচনা করিয়াছিলেন। তঁহার লিখিত শিশুদের উপযোগী কয়েকখানি পাটীগণিতও আছে। গুরুদাস দেশের জন্য যেরূপ পরিশ্রম করিয়া গিয়াছেন এরূপ অতি কম লোককেই করিতে দেখা যায়। রাজকাৰ্য হইতে অবসর গ্রহণ করিয়াও তিনি একদিনও অলস ভাবে কাটান নাই। যখন যে কাজে তীহাকে আহ্বান কবা হইয়াছে, তিনি তাহতেই যোগদান করিয়াছেন। সভাসমিতিতে যোগদানে তঁহার উৎসাহের অস্ত ছিল না। ছাত্রদের সঙ্গে