পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“እbr বঙ্গ-গৌরব অশ্বিনীকুমারের ছাত্রজীবনের একটি কথা এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সত্যের প্রতি র্তাহার যে প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল, মিথ্যাকে যে তিনি মহাপাপ মনে করিতেন, নিম্নলিখিত ঘটনাটি দ্বারা তাহা স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায়। অশ্বিনীকুমার যখন প্ৰবেশিকা পরীক্ষা দেন, তখন তাহার বয়স চৌদ্দ বৎসর ছিল। সে সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নিয়ম প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, কোন ছাত্র ষোল বৎসরের কম বয়সে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে পরিবে না। এ ক্ষেত্রে উক্ত অবস্থাপন্ন ছাত্রেরা যাহা করে, অশ্বিনীকুমারের বেলায়ও তাহাই হইয়াছিল-তাহার বয়স ষোলো বৎসর হইয়াছে লিখাইয়া তাহাকে পরীক্ষা দেওয়ান হয়। এফ-এ পাশ করিবার পর অশ্বিনীকুমারের মনে হইল যে, তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় সত্যের অপলাপ করিয়াছেন। যুবক অশ্বিনীকুমার তখন আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। ; এই অসত্য ব্যবহার তীহাকে দিবানিশি যন্ত্রণা দিতে লাগিল। তিনি তখন কলেজের অধ্যাক্ষের নিকট সমস্ত কথা নিবেদন করিলেন। অধ্যক্ষ মহাশয় যুবক অশ্বিনীকুমারের সত্যনিষ্ঠা দেখিয়া বিশেষ সন্তুষ্ট হইলেন ; কিন্তু এতদিন পরে আর আর কোন প্ৰতিবিধান সম্ভব নহে বলিয়া মত প্ৰকাশ করিলেন। অশ্বিনীকুমার তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রারের নিকট আবেদন করিলেন। রেজিস্ট্রর বলিলেন যে, এখন এই বিষয়টি সংশোধনের বাহিরে গিয়াছে, তঁহার আর কিছু করিবার সাধ্য নাই। কিন্তু, সত্যপরায়ণ অশ্বিনীকুমার কিছুতেই নিরস্ত হইলেন না ; এমন মিথ্যাচরণ দ্বারা তঁহার জীবনকে কলঙ্কিত করিতে তিনি কিছুতেই সম্মত হইলেন না। অন্য কোনো উপায় না দেখিয়া তিনি লেখাপড়া ছাড়িয়া দিবার সঙ্কল্প করিয়া কৃষ্ণনগর হইতে পলায়ন করিলেন। তঁহার অভিভাবকেরা সন্ধান পাইয়া তীহাকে বর্ধমান হইতে ধরিয়া আনিলেন। তখন তিনি বলিলেন যে, এই মিথ্যাচরণের প্রায়শ্চিত্ত করিবার জন্য তিনি দুই বৎসর কলেজে পড়িবেন না। তাঁহাই হইল ; আশ্বিনীকুমার দুই বৎসর কােল পড়া ত্যাগ করিয়া ঘরে বসিয়া রহিলেন। এমন সত্যনিষ্ঠ যুবক যে পরে দেশবিখ্যাত অশ্বিনীকুমার হইবেন, বাংলাদেশেব উজ্জ্বল রত্ন হইবেন, এই ব্যাপারেই তাহা বুঝিতে পারা যায়। অশ্বিনীকুমার কৃষ্ণনগর কলেজ হইতে বি. এ পাশ করিবার পর কলিকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ হইতে এম. এ পাশ করেন। তাহার পর কিছুদিন কৃষ্ণনগরে ও চাতরায় শিক্ষকতা করেন। তাহার পর বি.এল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া অশ্বিনীকুমার বরিশালে ওকালতি আরম্ভ করেন এবং তিন বৎসর ওকালতি করিবার পরই আইনব্যবসায় ত্যাগ করেন। এই তিন বৎসরেই অশ্বিনীকুমার বরিশালের প্রধান উকিল বলিয়া খ্যাতিলাভ করিয়াছিলেন। কিন্তু ভগবান তাঁহাকে উকিল হইবার জন্য সৃষ্টি করেন নাই ; বরিশাল জেলার সর্ববিষয়ে কল্যাণ সাধন করিবার জন্যই তিনি জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। সামান্য ওকালতি কি তঁহার ন্যায় মহাত্মাকে বধিয়া রাখিতে পারে? প্রসিদ্ধ ব্যবহারাজীব পরলোকগত মাননীয় ভূপেন্দ্রনাথ বসু”, মহাশয় একদিন একটি বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলিয়াছিলেন, “অশ্বিনীকুমার