পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৫২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

502 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খন্ড কাঠামো গেরিলা যুদ্ধের উদ্ভব যে কারনণই হোক না কেন এই যুদ্ধরীতির সাফল্যের জন্য কয়েকটি বিশেষ অবস্থায় প্রয়োজন হয়। যেমন পরিবেশ বা ভূমি প্রকৃতি, সেনাবাহিনীর গতিবিধির মধ্যে ঐক্য, গণসমর্থন এবং নিরাপত্তা, কর্ম বিভাগ ও নৈকট্য। পরিবেশ বলতে শুধু ভৌগলিক অবস্থাই বোঝায় না। এই পরিবেশ বলতে জয়বায়ু, উদ্ভিজ্জ, রাস্তাঘাট, স্থানীয় অর্থনৈতিক অবস্থা, গ্রাম ও শহরের অবস্থান এবং দেশের অধিবাসীদের দৃষ্টিভঙ্গীও বোঝায়। ভাষা ও সংস্কৃতি এ যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই দুইটি বিষয়ই পরিবেশের অন্তর্গত। গেরিলা বাহিনী যে অঞ্চলে কাজ করবে সেখানকার অধিবাসীরা যদি তাদের ভাষা না বোঝে তাহলে যুদের কাজ ভালভাবে চলতে পারে না। কারণ স্থানীয় জনগণের সহায়তা ছাড়া এ যুদ্ধ কোনমতেই চলতে পারে না। ভাষাগত ব্যবধান এ ব্যাপরে অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে। স্থানীয় জনগণের সংস্কৃতি ও ভাবধারা গেরিলা যুদ্ধের অনুকূল হওয়া চাই স্থানীয় জনসাধারণ যদি কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং তাদের মনোভাব যদি অতীতাশ্রয়ী বা ঐতিহ্যাশ্রয়ী হয়, তাহলে তারা গেরিলা যুদ্ধের বৈপ্লবিক রীতিটাকে মেনে নাও নিতে পারে। তার মানে, এ যুদ্ধ কেন হচ্ছে এবং তার রাজনৈতিক লক্ষ্য কি সে বিষয়ে জনগণকে ভালভাবে বোঝাতে হবে। মনে রাখতে হবে, এও হতে পারে জনগণ অকুণ্ঠভাবে যুদ্ধ হচ্ছে বলে মেনে নিতে পারে, কিন্তু যদি তার সাফল্য সম্বন্ধে সচেষ্ট না হয়, তাহলে সেখানে এ যুদ্ধ কখনই সফল হতে পারে না। এই যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ভৌগলিক অবস্থা। পাহাড়, জঙ্গল, নদ-নদী যা নিয়মিত সৈন্যদলের বিশেষভাবে বাধা সৃষ্টি করে, গেরিলা যুদ্ধের সেগুলি বিশেষভাবে দরকারী অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করে। সাবধান কোন ফাঁকা জায়গায় একটি মাত্র গ্রাম বা জলপথ বা ফাঁকা মাটের মাঝে একটি মাত্র বন বা জঙ্গল কোন ঘাঁটির উপযুক্ত নয়। কারণ সেই বিচ্ছিন্ন গ্রাম বা বনটি যে কোন সময় শত্রু সৈন্যরা ঘেরাও করে ফেলতে পারে তখন বাইরে পালাবার বা বাইরে থেকে লোক আসার কোন উপায় থাকে না। এরপর আসে গতিবিধির ঐক্যের কথা। একটি দেশের মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে গেরিলা বাহিনীরা কাজ করতে পারে। বিভিন্ন দিক থেকে শত্রু আক্রমণ করে বিপর্যস্ত করে ফেলতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলের ভেতর সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা চাই। বিভিন্ন গেরিলা বাহিনীর গতিবিধি ও কার্য কলাপের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি থাকা চাই। যেতেহু সাধারণতঃ অনুন্নত গেরিলাদের কাছে বেতার বা বিমান যোগাযোগ থাকে না। তাদের বিভিন্ন দলের কার্যকলাপও সবসময় জানা সাধ্য হয় না, শত্ররা এর সুযোগ নেয়। কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে দুই নিজস্ব দলের ভিতরেও ভুল বুঝাবুঝির জন্য সংঘর্স দেখা গেছে। গণসমর্থন জনগণের শক্তি যে কোন সৈন্যদলকে পরাস্ত করতে পারে। পরিবেশে ও ঐক্যের পর আসে গনসমর্থন ও গণনিরাপত্তার কথা। ব্যাপক গণসমর্থন ছাড়া গেরিলা যুদ্ধ মোটেই চলতে পারে না, সফল হওয়া দূরের কথা। পেতে পারে না। অবশ্য এইসব পাওয়ার জায়গা আরও আছে। বাইরের সমতাবলম্বী দল বা রাষ্ট্রের কাছে এবং শত্রদের কাছ থেকে। গণসমর্থন নিরাপত্তা বাড়িয়ে তোলে। জনগণ যত বেশী পরিমানে সমর্থন করবে তত বেশী নিশ্চিন্তে তারা ঘোরাফেরা করতে পারবে শত্রদের চোখে ধুলা দিয়ে। জনগণ তখন তাদের আশ্রয় দেবে ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।